করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি নির্ণয় করতে বিশ্বের নানা দেশে ঘরোয়া পরীক্ষার কিট বাজারে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, হাতের নাগালেই থাকবে এই কিটের দাম। কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব কিট দিয়ে সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ ও তা দিয়ে ফলাফল নির্ণয় করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় থাকছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, যত বেশি সম্ভব মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে, তত কমবে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা।
দক্ষিণ কোরিয়ার মতো একাধিক দেশ এই পথে সাফল্য পেয়েছে। আরও একটি কারণে পরীক্ষা জরুরি- অনেক ক্ষেত্রে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বাহক ব্যক্তির মধ্যে উপসর্গ থাকছে না। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যান্যদের সঙ্গে মেলামেশা করার ফলে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। বিপুল জনসংখ্যার দেশে ব্যাপকভাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে মুশকিল আসান হতে পারে করোনা অ্যান্টিজেন কিট। বাংলাদেশে সহজে করোনা পরীক্ষার এ ধরনের কিট বাজারে আনার আলোচনা চলছে। একইভাবে ভারতের খোলাবাজারেও এই ধরনের কিট মিলতে পারে। ভারতে ইতিমধ্যেই আটটি সংস্থার কিট উৎপাদন ও বিপণনের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই করোনা পরীক্ষার কিট ভারতের বাজারে চলে আসতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবরেটরিতেও শুরু হয়েছে করোনা পরীক্ষা। টাকা দিলে বাড়িতে এসেও নমুনা সংগ্রহ করে নেয় তারা। কিন্তু এতে রয়েছে দীর্ঘসূত্রীতা।
কেউ চাইলেই এই পরীক্ষা করাতে পারছেন, এমন নয়। তার ওপর রয়েছে রোগজনিত ভীতি এবং সমাজের একঘরে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। অনেকের মত, এসব ঝক্কি থেকে মুক্তি দেবে নয়া কিট। কোনও ব্যক্তি বুঝতে পারবেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না। যদিও বিষয়টা এত সহজ নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। ভারতের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও মেডিক্যাল সার্ভিস সেন্টার-এর রাজ্য সম্পাদক অংশুমান মিত্র বলেন, ‘‘বাড়িতে বসে কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা সহজ নয়। এই নমুনা নির্ভুলভাবে সংগ্রহ করতে পারেন নাক-কান-গলার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ জন্য রীতিমতো প্রশিক্ষণ লাগে। বাজারে কিট পাওয়া গেলেও বাড়িতে কে নমুনা সংগ্রহ করবেন?
করোনার মূল পরীক্ষাতেই নমুনা ঠিক না নেওয়া হলে রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বাড়ির ক্ষেত্রেও নমুনা ঠিক না হলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না।’’ অনেক চিকিৎসকের মতে, এই প্রক্রিয়াতে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও থাকবে। যে কিটে লালারস সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হল, সেটা ঠিকভাবে বর্জ্য হিসেবে অপসারণ করা না গেলে তা থেকে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। এসব কারণে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া ঘরোয়া কিটে সাফল্য পাওয়া কঠিন। এছাড়া রয়েছে ঘরোয়া পরীক্ষা কিটের নির্ভরযোগ্যতা।