পঞ্চমবারে বিএসএস ক্যাডার হলেন শিক্ষিকা তৃপ্তি

পূর্ব পশ্চিম প্রকাশিত: ০১ জুলাই ২০২০, ১৭:২৬

‘অনেকেই অবজ্ঞা করে বলতো- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি বলে বিসিএস হবে না, অথবা ভালো কোনো ক্যাডার হতে পারব না। কিন্তু আমি হতাশ হইনি, মানুষের নেতিবাচক কথাগুলোকে অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। হাল না ছেড়ে, চেষ্টা চালিয়ে গেছি। শেষ পর্যন্ত নিজের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।’

কথাগুলো বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া শিক্ষিকা আলেয়া জাহান তৃপ্তির। চারবার অকৃতকার্য হয়ে পঞ্চমবার মনের আশা পূরণ হয়েছে তার।

তৃপ্তির বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরশহরের দাতিয়ারা এলাকায়। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই সবার বড়। বাবা আলমগীর ভূইয়া ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আর মা আফরোজা খানম গৃহিনী। পরিবারের বড় সন্তান হওয়ায় দায়িত্বটা একটু বেশি ছিল তৃপ্তির। ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি ভীষণ মনযোগী তৃপ্তির লক্ষ্য ছিল শিক্ষক হওয়া। পড়ালেখায় বাবা-মা তাকে উৎসাহ জুগিয়েছেন সবসময়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স এবং ইডেন মহিলা কলেজ থেকে মাস্টার্স করা তৃপ্তি শিক্ষাজীবন শেষ করেই শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথমে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি বেসরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অঙ্কুর অন্বেষা বিদ্যাপিঠের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

শিক্ষকতা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের ফাঁকেই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন তিনি। তৃপ্তি ৩৪, ৩৫, ৩৬ ও ৩৭ তম বিসিএসে অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন। মন খারাপ হলেও হাল ছাড়েননি, মনোবল দৃঢ় রেখে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। দিনে কর্মব্যস্ত সময় পার করা তৃপ্তি বিসিএসের পড়াশোনা করেছেন মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত। পরীক্ষার কয়েক মাস আগে থেকে রাতজেগে পড়াশোনা করেছেন।

শেষমশ কাক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পেরে আত্মতৃপ্ত হওয়া তৃপ্তি বলেন, মেয়েদের পদে পদে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করার কারণে আমার অনেক কাছের মানুষও আমাকে অবজ্ঞা করেছে। কিন্ত আমার পরিবার আমাকে বরবারই সাহস জুগিয়ে গেছে। 'চারবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়েও অকৃতকার্য হয়েছি। কোনোবারই প্রিলিমিনারি পাস করতে পারিনি। বিসিএসের প্রথম ধাপ পার হতে না পারায় খুব খারাপ লাগতো, কিন্তু মনে জেদ ছিল আমাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতেই হবে।

তৃপ্তি আরো বলেন, আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃতিকন্যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুনকে দেখে শিক্ষকতা পেশার প্রতি আমার ঝোঁক আরও বেড়ে যায়। সেজন্য বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য মনে জেদ চেপে বসে। আমি অন্য ছেলে-মেয়েদের মতো ভালো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারিনি, কোচিং করারও সুযোগ পাইনি। বিসিএসের জন্য যা কিছু করেছি, সবকিছুই নিজে নিজে। মানুষের নেতিবাচক কথাগুলো আমি সবসময়ই অনুপ্রেরণা হিসেবে নিয়েছি। তবে আমার শিক্ষক ওসমান গণি সজিব আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন।

তিনি বলেন, ৩৮ তম বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে। পরীক্ষার আগে কয়েক মাস সারারাত পড়াশোনা করেছি। দিনের বেলায় সময় পেতাম না বলে রাতজেগে পড়েছি। আমার বাবা-মা চেয়েছিল প্রশাসন ক্যাডার হতে। কিন্তু আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিল শিক্ষা ক্যাডার।

তৃপ্তি বলেন, যদিও বাবা-মায়ের কথা রাখতে গিয়ে ফরমে প্রথম পছন্দ হিসেবে প্রশাসন ক্যাডার দিয়ে দ্বিতীয় পছন্দ দিয়েছিলাম শিক্ষা ক্যাডার। আমি মনেকরি, প্রশাসনসহ অন্য ক্যাডারের চাকুরেরা তার কাজের বাইরে কিছুই করতে পারেন না। কিন্তু একজন শিক্ষক তার মনের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজে লাগাতে পারেন এবং অনেক মানুষের মনে জায়গা করেত নিতে পারেন। মানুষ গড়ার কারিগরের এমন পেশায় যুক্ত হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us