মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে লোকজনের মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দেশটিতে করোনায় এ পর্যন্ত যত মানুষ মারা গেছেন, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বাংলাদেশি। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সৌদি আরবে মারা গেছেন ১ হাজার ৪২৮ জন। এঁদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা ৪৪৪।
করোনায় সৌদি আরবে এত বাংলাদেশির আক্রান্ত ও মৃত্যুর কারণ কী? দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতো সৌদি আরবেও গাদাগাদি করে ডরমিটরিতে থাকতে হয় বাংলাদেশি কর্মীদের। এ কারণে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। বাংলাদেশি কর্মীদের বেশির ভাগ কাজ করেন জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থাপনায়। এটিও সংক্রমণ ছড়ানোয় ভূমিকা রাখছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, এখন বিশ্বের ১৯টি দেশে ১ হাজার ২৭৬ জন বাংলাদেশি মারা গেছেন। এঁদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ৬৫১ জন মারা গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশে। আর মধ্যপ্রাচ্যে মারা যাওয়াদের অধিকাংশই হচ্ছেন সৌদি আরবে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিক।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, কুয়েত ও বাহরাইনে বাংলাদেশের মিশনের কর্মকর্তা ও প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব দেশে করোনায় মারা যাওয়া বাংলাদেশিদের বড় অংশের হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিক ও কিডনি রোগ ছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর বেশির ভাগের করোনা শনাক্ত হয়।
সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ প্রথম আলোকে বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধানটা কঠোরভাবে মেনে না চলায় বাংলাদেশের লোকজনের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকেরা গাদাগাদি করে সাত থেকে আটজন এক কামরায় থাকছেন। তিন সপ্তাহ ধরে দেখা গেছে, আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ঘুরেফিরে একটা জায়গায় আটকে থাকছে।
দুই দশক ধরে জেদ্দায় বসবাস করছেন জোবায়ের আহমেদ। তাঁর সবজির দোকান ও সেলুন রয়েছে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে জানান, তাঁর দুই আপনজন ফখর উদ্দিন ও আহমেদ বুধবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। সৌদি সরকার নিজেদের নাগরিকদের পাশাপাশি প্রবাসী কর্মীদের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য নেই। তাঁর মতে, সৌদি আরবে থাকা বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ হচ্ছেন শ্রমিক। তাঁদের মৃত্যুর জন্য গাদাগাদি করে থাকা, জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গায় কাজ, বাড়তি শারীরিক ও মানসিক চাপ দায়ী।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের পরই সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। দেশটিতে মারা গেছেন ১১০ জন।