তুতেনখামেনের সমাধি সৌধে যারা গিয়েছেন তারাই অভিশাপে মরেছেন!
প্রকাশিত: ২৪ জুন ২০২০, ১১:৪৬
তুতেনখামেন মিশরের অষ্টদশ রাজবংশের একজন ফারাও ছিলেন। তাকে নিয়ে ইতিহাসে রয়েছে নানা তথ্য। বিশ্ববাসীরাও এই ফারাওয়ের জীবন নিয়ে জানতে বেশ কৌতূহলী। খ্রিষ্টপূর্ব ১৩৩৩ অব্দ থেকে ১৩২৫ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত তার শাসনকাল ছিল। তার সমাধি সৌধ আজো রহস্য হিসেবেই রয়ে গেছে। ১৯২২ সালে হাওয়ার্ড কার্টারের নেতৃত্বে একদল গবেষক তার সমাধি সৌধ আবিষ্কার করেন। তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারের পর অনেকেই তার অভিশাপের শিকার হয়েছে বলে অনেকের বিশ্বাস। তার সেই রহস্যময় অভিশাপ নিয়েই আজকের লেখা।
হাওয়ার্ড কার্টার এবং লর্ড কার্নারভন ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং মিশরীয় প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গবেষক। তারা ১৯২২ সালের ২৯ নভেম্বর ফারাও তুতেনখামেনের সমাধি সৌধে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তারা সমাধির কফিন রাখার স্থানের পৌঁছানোর পূর্বে পাথরে লেখা একটি অশুভ হুমকি দেখতে পান। যেখানে লেখা ছিল, রাজার শান্তি বিঘ্নিত করা ব্যক্তির দ্রুত মৃত্যু হবে। তারপরও তারা সমাধিতে প্রবেশ করে বিখ্যাত ফেরাউনের কফিন প্রচুর পরিমাণ ধনসম্পদসহ আবিষ্কার করেন। এর ফলে বিশ্ব মিশরবিদ্যার আধুনিক যুগে প্রবেশ করে।
তুতেনখামেনের সমাধি সৌধ উন্মুক্ত করার দিন হাওয়ার্ড কার্টার বাসায় ফিরে দেখেন তার পোষা পাখি ক্যানারি কোবরা সাপের কামড়ে মারা গিয়েছে। কোবরা সাপ হলো ফেরাউনদের মুখোশের শিখরের প্রতীক।
প্রচলিত আছে, এখান থেকেই শুরু হয় তুতেনখামেনের অভিশাপ। কার্টারের পোষা পাখি মারা যাওয়া ঘটনা নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছিল। যেখানে দাবি করা হয়েছিল এটা তুতেনখামেনের অভিশাপের প্রথম চিহ্ন।
অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তুতেনখামেনের সমাধিতে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের সঙ্গে অদ্ভুত রহস্যময় ঘটনা ঘটতে থাকে। তুতেনখামনের সমাধি খোলার ছয় সপ্তাহ পরে, লর্ড কার্নারভন একটি সংক্রামিত মশার কামড়ে রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। কার্নারভনের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরে ইংল্যান্ডে তার প্রিয় সুসি কুকুর অদৃশ্য কোনো কিছুর প্রতি প্রচণ্ড গর্জন করতে করতে মৃত্যুবরণ করে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তুতেনখামেনের অভিশাপেই এসব হচ্ছে।
শার্লক হোমসের স্রষ্টা স্যার আর্থার কোনান ডয়েল অনুমান করেছিলেন, লর্ড কার্নারভনের মৃত্যুর কারণ ছিল তুতেনখামেনের পুরোহিতদের দ্বারা রাজকীয় সামাধি রক্ষার জন্য সৃষ্ট ‘আধিভৌতিক’ কিছু। তার এই মতামত গণমাধ্যমগুলো ঢালাওভাবে প্রকাশ করেছিল।
এরপর অভিশাপের শিকার হয় মিশরের যুবরাজ আলি কামেল গাহমি বে। যুবরাজের স্ত্রী তাকে গুলি করে হত্যা করে। তারপর একটি হোটলে কার্নারভনের ভাইয়ের মৃত দেহ পাওয়া যায়। সে রক্তের বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করে। তুতেনখামেনের অভিশাপের শিকার সবাই একে একে মৃত্যুবরণ করতে থাকে।
তৎকালীন দক্ষিণ আফ্রিকার ধনকুবের ওলফ জোয়েল তুতেনখামেনের সমাধিতে গিয়েছিলেন। এর কয়েক মাস পরেই তিনি হত্যার শিকার হয়েছিলেন। সে সময়ের মার্কিন ফিনান্সার জর্জ জে গোল্ড ১৯২২ সালের শেষ দিকে তুতেনখামেনের সমাধিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন এবং ছয় মাস জ্বরে ভুগে মৃত্যুবরণ করেন।
তুতেনখামেনের সামধির অভিশাপে আরো বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করে বলে জানা যায়। স্যার আর্কিবাল্ড ডাগলাস-রেড একজন বিখ্যাত রেডিওলজিস্ট ছিলেন। তিনি তুতেনখামেনের মমি এক্স-রে করেন। এক্স-রে করার কিছুদিন পর তিনি রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। স্যার লি স্ট্যাক সুদানের গভর্নর জেনারেল ছিলেন। তিনি সমাধি সৌধটি পরিদর্শনের কয়েক দিন পর কায়রোয় চালানো অবস্থায় হত্যার শিকার হন। কার্টারের খনন দলের সদস্য এ সি ম্যাস আর্সেনিক বিষক্রিয়াজনিত করণে মারা যান। সমাধিটি আবিষ্কারের চার মাস পর কার্টারের ব্যক্তিগত সচিবকে তার বিছানায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ খবর জেনে তার বাবা সাত তলার উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।
এই অভিশাপে সর্বশেষ তুতেনখামেনের সমাধি অবিষ্কার দলের নেতৃত্বদানকারী হাওয়ার্ড কার্টার মৃত্যুবরণ করেন। তিনি সামধির কফিনের ঘর খুলেছিলেন। তুতেনখামেনের অভিশাপ শুধু এই মৃত্যুগুলোর জন্যই আতঙ্ক সৃষ্টি করেনি। অন্যান্য রহস্যজনক ঘটনাও এই বিশ্বাসকে স্থির করেছিল যে ফারাও তুতেনখামেনের আত্মা সেখানেই অবস্থান করে তার সমাধিস্থলকে রক্ষা করে চলেছে।
জানা যায়, সমাধিস্থল থেকে অন্য একটি মমির কাছ থেকে কার্টারের একজন বন্ধু ইনগ্রাম একটি বস্তু নিয়েছিলেন। যাতে লেখা ছিল, যে এই দেহ সরাবে তার কাছে আগুন, পানি এবং মহামারি আসবে। এর কিছু দিন পরেই ইনগ্রামের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। পুনর্নির্মাণের পর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাওয়ার্ড কার্টার অভিশাপের বিষয়ে সন্দিহান হলেও তার ডায়েরি থেকে জানা যায় তার সঙ্গেও অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটেছিল। যারা অভিশাপের বিষয়টি বিশ্বাস করে না, তাদের যুক্তি তুতেনখামেনের সমাধি আবিষ্কারে কাজ করা ব্যক্তিরা বেশিরভাগই দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবনযাপন করেছেন।
এক সমীক্ষায় দেখা যায়, সমাধি সৌধটি খোলার সময় ৫৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রায় এক দশকেরও বেশি সময়ে আট জন মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে স্বয়ং কার্টার ১৯৩৯ সালে মারা যান। আর যারা এই অভিশাপ তত্ত্বে বিশ্বাস করেন তারা দাবি, এই অভিশাপের জন্য কয়েক দশক পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ উল্লেখ করা হয়, ১৯৭২ সালের একটি ঘটনা। তুতেনখামেনের সমাধির মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামের একটি বিখ্যাত প্রদর্শনীতে আনা হয়। জাদুঘরের পুরাকীর্তি বিষয়ক পরিচালক ড. গামাল মেহরেজ এসময় তুতেনখামেনের প্রতি উপহাস করে বলেন, আমি সারা জীবন মিশরের প্রত্নতত্ত্ব গবেষণায় কাটিয়েছি এবং আমার জানা আছে তুতেনখামেনের অভিশাপ সম্পর্কিত সমস্ত ঘটনাই নিছক দুর্ঘটনা এবং এগুলো সত্যিকার অর্থেই কাকতালীয়।