ওয়েব প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ৮০ বিশিষ্ট ব্যক্তির
প্রকাশিত: ২১ জুন ২০২০, ১০:০১
সম্প্রতি দেশীয় ওয়েব প্ল্যাটফর্মে 'অশ্লীল কনটেন্ট' প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগকে কেন্দ্র করে শুক্রবার ১১৭ নির্মাতা ওয়েব কনটেন্ট নিয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরির পক্ষে বিবৃতি দিয়েছিলেন। এবার ওয়েব প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউবের কনটেন্ট প্রদর্শনের বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন সৈয়দ হাসান ইমাম, মুস্তাফা মনোয়ার, মামুনুর রশীদ, আলী যাকের, আবুল হায়াত, দিলারা জামান, ফেরদৌসী মজুমদার, আসাদুজ্জামান নুরসহ মোট ৮০ ব্যক্তি।
বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেক দিন যাবৎ কিছু ইউটিউব এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার সঙ্গে কিছু নির্মাতা প্রযোজক, নাট্যকার এবং অভিনয়শিল্পী কুরুচিপূর্ণ নাটক পরিবেশন করে আসছে। এই নাটকগুলির মধ্যে কাহিনির প্রয়োজনে নয় একেবারেই বিকৃত রুচিসম্পন্ন নাটক নির্মাণ করে বিবেকবান ও সচেতন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমরা এমন কাজকে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করি, নিন্দা জানাই। বাংলাদেশের টেলিভিশন নাটক জন্মলগ্ন থেকেই পারিবারিক বিনোদন মাধ্যম হওয়ায় দর্শকের রুচি ও মূল্যবোধ নির্মাণে ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন আসার পর কিছু প্রতিভাবান নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা অভিনেত্রী ও কলাকুশলী বাংলাদেশের এই মাধ্যমকে এক নতুন মহিমায় স্থাপন করেছিল। কিন্তু কিছু কিছু চ্যানেলগুলিতে নাটকের মান এমনভাবে নেমে এসেছে যে বাংলাদেশের নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অনেক দর্শক। এর মধ্যেও কিছু ব্যতিক্রমী চ্যানেলে পরিচালকেরা কিছু ভালো কাজ করার তাগিদও অনুভব করেছে। যার প্রতিফলন আমরা প্রায়শই চ্যানেলগুলোতে দেখতে পাই। কিন্তু এর মধ্যে আবার অনলাইন প্রচারমাধ্যমগুলিতে অবাধ প্রচারের সুযোগে যৌনতা এবং ভায়োলেন্সকে উপজীব্য করে অশ্লীলতাকে আশ্রয় করেছে। সম্প্রতি সেই সব নাটক ওয়েবসাইট ও ইউটিউবে প্রদর্শিত হয়ে বাঙালির চিরন্তন সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে আঘাত হানতে শুরু করেছে। এর আগে ভাষাকে বিকৃত করার মাধ্যমে কিছু পরিচালক নাটক নির্মাণ করায় জনরোষে পতিত হয় এবং মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনায় কিছুটা প্রশমিত হয়।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি সম্প্রচার নীতিমালা প্রকাশ করে যেখানে বিষয়গুলো সম্পর্কে নির্দেশনা রয়েছে। আশির দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার প্রবণতার ফলে দর্শক সিনেমা বর্জন করেছিল। একইভাবে দর্শক যদি আমাদের নাটক বর্জন করতে থাকে তাহলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
প্রযুক্তির উত্তরোত্তর আধুনিকতার ফলে আমরা টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়াই অন্যান্য মাধ্যমে সংযুক্ত হতে পারছি (যেমন ইউটিউব, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম) আমরা এসবকে নিয়ন্ত্রণ বা বর্জন করার পক্ষপাতি নই। আমরা শিল্পীর স্বাধীনতা ও ভিন্নমতে বিশ্বাসী। কাহিনির প্রয়োজনে কোন শিল্পিত উপস্থাপনার খবরদারিতে আমরা বিশ্বাস করি না কিন্তু অপ্রয়োজনে শুধুমাত্র দর্শকটানার মিথ্যা প্রলোভন আমাদের নাটক শুধুই বিনোদনের পণ্য হয়ে দাঁড়াক তাও চাই না। এটিও উদ্বেগের বিষয় যে, ওয়েব বা এই ধরনের প্ল্যাটফর্মে নাটক পাইরেসি হয়ে অন্যত্র চলে যায় এবং খণ্ডিতভাবে প্রকাশ হলে বিভ্রান্তি ছড়ায় যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।