ঠিক অর্ধ শতাব্দী আগের কথা। টেলিভিশনের পর্দায় দুরদর্শন তখন মানুষের মধ্যে ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠছে। তাও সাদাকালো পর্দায়। রঙিন পর্দায় দুরদর্শন ১৯৭০ দশকের শেষ দিক থেকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল প্রথমবারেরমত সম্প্রচার করা হয়েছিল টেলিভিশনের পর্দায়। কিন্তু সেবার ছিল সাদা-কালো টিভিতে। দুটি ধূসর রংয়ের পিকচারটিউবেই বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখতে হয়েছিল সারা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের। তাও, টিভির সামনে বসে ১৯৬৬ সালে ইংরেজদের বিশ্বকাপ জয় দেখেছিল প্রায় ৪০ কোটি মানুষ।
১৯৭০ বিশ্বকাপেই সর্বপ্রথম রঙ্গিন পর্দায় খেলা সম্প্রচার করা হয় এবং সারা বিশ্বের মানুষ নতুন এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলো। সেই রঙ্গিন দুনিয়ার প্রথম বিশ্বকাপেই নিল-হলুদের উজ্জ্বলতা দেখিয়েছিল বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলার পেলের ব্রাজিলের। দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দুটি দল মুখোমুখি হয়েছিল মেক্সিকো সিটির আজটেকা স্টেডিয়ামে।
বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে সবচেয়ে অ্যাটাকিং ফুটবল উপহার দিয়ে ইতালিকে ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত বিশ্বচ্যাম্পিয়নের মুকুট পরে ব্রাজিল। সে সঙ্গে চিরদিনের মত জুলেরিমে ট্রফিটি নিজেদের করে নেয় পেলে অ্যান্ড কোং। চলতি সপ্তাহেই সেই রঙ্গিন পর্দায় দেখানো বিশ্বকাপ ফুটবলের অর্ধ শতাব্দী পূরণ হতে যাচ্ছে। ১৯৭০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই শুরু হয় রঙ্গিন টিভিতে খেলা সম্প্রচার। বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলাররাই তখন একে অপরের মোকাবিলা করছিল। অবশেষে ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চস্থ হলো। চার বছর আগে, ১৯৬৬ সালে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়াম থেকে সম্প্রচারিত ফাইনালটি এমনিতেই একটা রেকর্ড গড়েছিল।
৪০ কোটি দর্শক দেখেছিল সাদা-কালো টিভিতে সম্প্রচারিত সেই ফাইনাল। ১৯৭০ বিশ্বকাপের ফাইনাল ছিল তাই একটা চ্যালেঞ্জের মুখে। রঙ্গিন টিভিতে হলেও, চার বছর আগের টিভি দর্শকের রেকর্ড কি ভাঙতে পারবে ৭০-এর মেক্সিকো বিশ্বকাপ? কিন্তু পেলের নিল-হলুদের ব্রাজিল সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিয়েছিল। শুধুমাত্র রঙ্গিন টিভিতেই সম্প্রচার নয়, সেবার ম্যাচের কিছু সেরা মুহূর্ত রিপ্লে করেও দেখানোর ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল। বিষয়টা ছিল দর্শকদের কাছে দারুণ এক অভিজ্ঞতার। সেই বিশ্বকাপ যারা টিভিতে সরাসরি দেখেছেন এবং এখনও জীবিত আছেন, তাদের কাছে সেটা আজীবন মনে রাখার মতই এক স্মৃতি। ফিফা ওয়েবসাইটকে কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে পেলে বলেছিলেন, ‘আমি এরপর এই ফাইনালটা অনেকবারই দেখেছি। কারণ, সেবারের অনেক ভিডিও এখনও পাওয়া যায়। আমি কখনোই নিজে থেকে কেয়ারফুল ছিলাম না। কিছু হলেই কেঁদে দিতাম।’