দেশ ছেড়েছেন ২২ বছরের বেশি সময়। এখনকার আবাস পাশের দেশ ভারতে। সেখানকার নগরিকত্বও নিয়েছেন। তবে এ দেশের মানুষ তাঁকে আজও ভোলেনি। চলচ্চিত্রপ্রেমী সবার আজও প্রিয়মুখ তিনি। 'বেদের মেয়ে জোসনা' একটি ছবিই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগের পর যুগ। শুধু ছবি অভিনয় নয়, কালজয়ী গান 'ওরে ও বাঁশিওয়ালা'র জন্যও মনে রাখবে এই মানুষটিকে। তিনি আর কেউ নন, অঞ্জু ঘোষ। বুধবার দুপুরে কথা হলে জানালেন, কলকাতার বাড়িতে বাগানের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত তিনি।
অবশ্য তাঁর ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে গেল বছর। অঞ্জু ঘোষ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক বেধেছে পশ্চিমবঙ্গে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে মিজ ঘোষের নাগরিকত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বলা হয়েছে, তিনি আসলে বাংলাদেশের নাগরিক এবং ‘কারসাজি করে তাঁকে ভারতের নাগরিক বানানো হয়েছে’। একজন বিদেশি কীভাবে ভারতের একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, সেই প্রশ্ন তুলছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল। তবে বিজেপি দাবি করেছে যে মিজ ঘোষের বাবা বাংলাদেশের মানুষ ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাঁর জন্ম–কর্ম, সবই কলকাতায়। নাগরিকত্ব নিয়ে বিতর্ক আপাতত থাক। বর্তমানে কলকাতার সল্টলেকে থাকেন অঞ্জু ঘোষ। মা–বাবা দুজনেই মারা গেছেন। সময় কীভাবে কাটে জানতে চাইলে অঞ্জু ঘোষ বলেন, ‘লকডাউন ঘরে বসে কাটে। প্রয়োজনীয় কাজে মাঝেমধ্যে বাইরে যেতে হয়। আমাদের এদিককার পরিস্থিতি ভালো। তবে আমার একটুও মনে হয় না, সময় কাটছে না। একটা বাড়ি দেখাশোনা করে সামলে রাখাটাও অনেক সময়ের কাজ। এসব করছি। রান্নাবান্না করি। বাগানে সময় কাটাই অনেক বেশি।’ পরিবার নিয়ে খুব বেশি কিছু বলতে চাইলেন না এই অভিনয়শিল্পী।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে বড় হয়েছেন অঞ্জু ঘোষ। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে তাঁর সিনেমায় অভিনয় শুরু। প্রথম অভিনীত সিনেমা তমিজ উদ্দিন রিজভীর ‘আশীর্বাদ’। তবে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’। গত শতকের আশির দশক থেকে অভিনয়জীবন শুরু করা অঞ্জু ঘোষ ১৯৯৮ সালে যখন দেশ ছাড়েন, তত দিনে অভিনয় করেছেন তিন শতাধিক ছবিতে। দুই দশক পর ২০১৮ সালের শেষ দিকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য ঢাকায় আসেন তিনি। কী কারণে দেশ ছেড়েছেন, সে বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু বলেননি। বেশ কয়েকবার এ প্রশ্ন এড়িয়ে যান। একটি বাক্যে প্রশ্ন এড়িয়ে যান, ‘এ বিষয়ে বলতে চাই না।’ তবে মনে যে কষ্ট ছিল, তা তাঁর কথায় স্পষ্ট। তিনি সরাসরি কিছু না বললেও তাঁর ঘনিষ্ঠজনের মাধ্যমে জানা গেছে, কয়েকজন পরিচালক ও স্থানীয় সন্ত্রাসীরা উত্ত্যক্ত করতেন।