অস্ট্রেলিয়া করোনার প্রথম ধাক্কা বেশ ভালোভাবেই সামলে উঠেছে। অস্ট্রেলিয়াতে এখন কমিউনিটি সংক্রমণ নেই বললেই চলে। তাই বিধিনিষেধ বেশ সহজ করে দেওয়া হয়েছে ১ জুন থেকে। প্রায় তিন মাস মোটামুটি ঘরবন্দী থাকার পর মানুষ তাই ঘুরে বেড়ানো শুরু করেছেন আগের মতো করে।অস্ট্রেলিয়াতে এখন চলছে বিভিন্ন ধরনের ফল তোলার মৌসুম। আপেল, কমলা, মাল্টা, পারসিমন, অ্যাভোক্যাডো এমন আরও বহু ফল আপনি চাইলেই সরাসরি খেতে গিয়ে তুলতে পারেন।
আমাদের এর আগে কখনো ফল তুলতে যাওয়া হয়নি। তাই যখন শম্পা আপু ও নাসের দুলা ভাই প্রস্তাব করলেন আমরা একবাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। আসলে সমমনা মানুষদের সঙ্গে যেকোনো কাজ করাই অনেক বেশি আনন্দের।ঠিক করা হলো ৭ জুন রোববার আমরা কমলা তুলতে যাব। ৮ জুন সোমবার রানির জন্মদিনের ছুটি থাকায় রোববার খেত থেকে ফিরে এসে বিশ্রাম নেওয়া যাবে। অস্ট্রেলিয়ার ইংরেজিটা সাধারণ ইংরেজির তুলনায় আলাদা। যেমন অস্ট্রেলিয়ান না বলে অস্ট্রেলিয়ানদের অজি বলা হয়। প্রত্যেকের নামকেও ছোট একটা ফর্মে ডাকা হয়, যেমন মাইকেল হয়ে যায় মিক, সিম্পসন হয়ে যায় সিমো। এ ছাড়া ফলফলাদিরও আলাদা নাম আছে, যেমন অস্ট্রেলিয়াতে কমলাকে বলা হয় মান্দারিন আর বাংলাদেশে যেটাকে মাল্টা বলা হয়, অস্ট্রেলিয়াতে সেটাকে বলা হয় অরেঞ্জ। আমরা গিয়েছিলাম মান্দারিন তুলতে। রোববার সকালবেলায় আমরা সবাই হাজির হয়ে গেলাম শম্পা আপুদের বাসায়। আমরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই দুলা ভাই বেরিয়ে গেলেন শ্যালিকা মিশু আর মিকিকে আনতে। মিশু আসতে পারলেন না তাঁদের বাসায় অতিথি আসবেন বলে। ইতিমধ্যেই নিজাম ভাই, আইভি আপা আর একমাত্র সন্তান জেভিয়ার চলে এল।
গোছানো শেষ করে আমাদের গাড়িতে আমরা, শম্পা আপুদের গাড়িতে শম্পা আপু, নাসের দুলা ভাই, তাঁদের একমাত্র কন্যা তানিশা আর শ্যালিকা চেপে বসলেন। নিজাম ভাইয়েরা তাঁদের গাড়িতে। মিন্টো থেকে যাত্রা শুরু করে আমরা ইঙ্গেলবার্নে শম্পা আপুর বাবার বাসায় থামলাম। সেখান থেকে আলাদা গাড়িতে রুবেল, পুতুল আর একমাত্র পুত্র আরহানের সঙ্গে শম্পা আপুর মা রওনা দিয়ে দিলেন। আর রাস্তা থেকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন শ্যালিকা টিনা আর ভায়েরা ভাই মিশু। সিডনির লাফটনডেল সাবার্বের ওয়াটকিনস ফ্যামিলি ফার্ম মান্দারিন তুলতে যাওয়ার জন্য খুবই বিখ্যাত জায়গা। শম্পা আপুরা এর আগেও গিয়েছেন, তাই তাঁরা এই জায়গাটা ঠিক করলেন। মিন্টো থেকে যেতে মোটামুটি দুই ঘণ্টা লাগে, আর সিডনি থেকে ঘণ্টা দেড়েকের রাস্তা। ওখানে যাওয়ার রাস্তাটা দুর্দান্ত। শেষের একটা ঘণ্টা পুরোপুরি গ্রাম এলাকার মধ্য দিয়ে রাস্তা, কোনো সিগন্যাল নেই। গ্রামের মধ্য দিয়ে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ। একদিকে পাহাড় অন্যদিকে নদী।