নদী প্রকৃতি ও ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে

বাংলা ট্রিবিউন প্রকাশিত: ০৮ জুন ২০২০, ১২:০৮

উৎপাদন ব্যবস্থা, চারপাশের পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক— এগুলো রোগের সংক্রমণ কমাতে বা বাড়াতে পারে। প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোনও সংক্রমণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা গুরুত্বপূর্ণ। পানি বা ভূভাগ দ্বারাও এই বিচ্ছিন্নতা হতে পারে। নেপালের মতো দেশকে উদাহরণ হিসেবে টেনে এনে তারা বলছেন, পাহাড়াবেষ্টিত ও ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে এসব কারণেই করোনা সংক্রমণ কম।

৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঢাকায় সাংবাদিকদের জানান, সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার অনুযায়ী বাংলাদেশকে লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে ভাগ করা হবে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠকের পর এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা বলছে, ভৌগোলিক বা নদীকেন্দ্রিক বিচ্ছিন্নতা নিয়ে তারা এখনও কাজ শুরু করেনি।সম্প্রতি বাংলাদেশের ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও সংক্রমণের ধরণের ওপর বাংলা ট্রিবিউনের এক স্টাডিতে জানা যায়—ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে ছড়ানোর গতি আর রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ছড়ানোর গতি এক রকম নয়। এই দুটি অঞ্চলের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্যের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সামনে এসেছে ভূতাত্ত্বিক বিভাজন, অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও টেস্টিং ফ্যাসিলিটির অসাম্য।

বাংলা ট্রিবিউনের স্টাডি বলছে, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে প্রতি লাখ মানুষে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ জন এবং এই অঞ্চলে চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৬৭ লাখ। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতি লাখ মানুষে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪ জন। এই অঞ্চলে চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের সংখ্যা এক কোটি ৭৭ লাখ।স্টাডি বলছে, বাংলাদেশে করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ৮৫.৫ শতাংশ মানুষ চল্লিশোর্ধ্ব। অর্থাৎ, দেশের এই দুই প্রান্তের ঝুঁকিপূর্ণ নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সমান হলেও সংক্রমণের তারতম্য ব্যাপক। তাই যদি এই অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণের তারতম্যের বিবেচনায় এখনই অঞ্চল ভিত্তিক কার্যকর পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে অনেক প্রাণ বাঁচানো যেতে পারে।

সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান প্রভাব ফেলে কিনা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'ভৌগোলিক অবস্থান তো অবশ্যই প্রভাব ফেলে, ম্যাটার করে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'এ কারণেই পাহাড়ি এলাকা, সুন্দরবনের মতো জায়গা—যেখানে লোক যেতে পারে  না, সেখানে কম সংক্রমণ হবে। যেখানে ‘হার্ড টু রিচ এরিয়া’সেখানে সংক্রমণ কম হবে, ইনফেকশন হবে না। এটাই নিয়ম।'

বাংলাদেশের কোথাও বেশি কোথাও কম সংক্রমণের কারণ কী জানতে চাইলে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, 'ইতালি থেকে মানুষ যখন দেশে এসেছে, তখন তারা যেখানে বেশি গিয়েছিল সেখানেই সংক্রমণ বেশি। ঢাকাতে আড্ডা দিয়েছে, লকডাউন মানেনি। ঘনবসিতপূর্ণ এলাকা নারায়ণগঞ্জেও একই অবস্থা। আর এ কারণে এসব এলাকায় বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হয়েছে। সংক্রমিতদের চাল-চলন, আচরণ—এগুলোর ওপর সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি নির্ভর করে। প্রথম থেকেই উত্তরাঞ্চলে সংক্রমণ কম, কারণ সেখানে আক্রান্ত মানুষ কম গিয়েছিল।'

নদী গবেষক শেখ রোকন বলেন, 'সংক্রমণ ঠেকাতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্নটা কাজের। তবে এ ক্ষেত্রে নগরায়ণ ও ঘনবসতির বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা ট্রিবিউনের স্টাডির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'তাদের স্টাডিতে বলা হচ্ছে, যমুনার একপাশে সংক্রমণ বেশি, আরেক পাশে কম। বলাই বাহুল্য, যমুনার পূর্বপাশে বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ার আগে  শিল্পায়ন ছিল না। জনবসতি পাতলা ছিল। কিন্তু শিল্পায়নের কারণে এখন বসতি বাড়ায় সংক্রমণটা এ অঞ্চলে বেশি, কিন্তু যমুনার পশ্চিমাঞ্চলে কম। লক্ষ করবেন, দ্বীপগুলোতে পানি দিয়ে ভূখণ্ড ভাগ করা, দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতে সে কারণে কম আক্রান্ত। ফলে নদী ধরে এলাকাগুলো বিভাজন করা গেলে সংক্রামণ ঠেকানো যাবে। কেননা দুই স্থলের মধ্যে যে কোনও ধরনের স্থল সংযুক্তি থাকলে যেকোনোভাবে যাতায়াত অব্যাহত থাকবে। নদীকেন্দ্রিক যোগাযোগ যেখানে, সেখানে ব্রিজটা বন্ধ করে, ফেরি বন্ধ করে দিলেই বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করা যাবে। সেদিক থেকে এটি ভালো পর্যবেক্ষণ।’

প্রাণ প্রকৃতি গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, 'যেকোনও সংক্রমের ক্ষেত্রে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা গুরুত্বপূর্ণ। সেই বিচ্ছিন্নতা পানি বা ভূভাগ দ্বারাও হতে পারে। নেপালের মতো দেশগুলোর দিকে নজর দিলে এর সত্যতা মেলে। ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রগুলোতেও সংক্রমণ তেমন একটা হয়নি। আমাজন আদিবাসীদের মধ্যে কিছু পাওয়া গেছে, কিন্তু সেটি বাইরে থেকে যাওয়া।'
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us