যখন লিখতে বসেছি তখনো ঘূর্ণিঝড় আম্পান সমুদ্রে অবস্থান করছে। বিকেল ৩-৪টা নাগাদ ভারতের দিঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করবে। এরপর হয়তো সেটি কলকাতা শহরের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা-যশোর অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে উত্তর দিকে রওনা দেবে। কোনো কোনো পূর্বাভাসে দেখলাম, এটি রাজশাহীর দিক দিয়ে পরবর্তী সময়ে আসামে যেতে পারে। কোনো পূর্বাভাসে দেখলাম, একটু পূর্ব দিকে গিয়ে ঢাকার কাছাকাছি ময়মনসিংহ অতিক্রম করতে পারে। এর দিক ঘন-ঘন বদলাতে পারে। এ কারণে ২৪ ঘণ্টা আগে সুনির্দিষ্ট পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তবে বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ ভূ-খণ্ডে প্রবেশ করলেও এর প্রভাব রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত প্রচণ্ড থাকবে।
এখানেই একটি ভয়ের কথা আছে। কারণ অমাবস্যার সময় এটা। প্রাকৃতিকভাবেই জোয়ার-ভাটার মাত্রা এই সময় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। স্বাভাবিকের তুলনায় সাতক্ষীরা, খুলনা অঞ্চলে ভরা কটালের প্রভাবে নদীর পানি ৭-১০ ফুট বেশি হতে পারে। এই ভরা কটালে যদি জলোচ্ছ্বাসটি আমাদের অংশে প্রবেশ করে, তাহলে ওই সব উপকূলীয় বাঁধগুলো উপচে ভেতরে পানি ঢোকার বিরাট আশঙ্কা রয়েছে। তবে এটি যেহেতু ভারতের সুন্দরবন ও আমাদের সুন্দরবনের অংশ দিয়ে ঢুকবে, সেহেতু জলোচ্ছ্বাসের শক্তি কিছু কম হতে পারে। তার পরও বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরই বলছে যে স্বাভাবিক অবস্থার জোয়ারের তুলনায় ৮-১০ ফুট বেশি জোয়ার হতে পারে।
এমনিতেই আমাদের উপকূলীয় বাঁধগুলো বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট অঞ্চলে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। আজকের কাগজে দেখলাম, আইলার পর কয়রা থানায় যেসব জায়গায় বাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢুকেছিল, সেগুলো জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়েছে। বহু জায়গায় অত্যন্ত দুর্বল অবস্থায় আছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা অঞ্চলের বহু জায়গায় নদীভাঙনের কারণে নদী একেবারে বাঁধের কিনারে চলে এসেছে। অনেক জায়গায় বাঁধের অর্ধেকের বেশি ভেঙে গেছে। কাজেই আম্পানের চাপে বহু জায়গায় বাঁধ ভাঙলে আমি বিস্মিত হব না। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জার কথা।