প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, আমাদের দেশের জনগণকে বাঁচাতে হলে সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। ১৯৭২ সালের ১৯ মে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপের জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু এ কথা বলেন।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ওই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন— বাংলাদেশে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনও বিদেশি সাহায্য গ্রহণ করা হবে না। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার বিনিময়ে আমরা এধরনের কোনও সাহায্য গ্রহণ করতে পারি না। শর্তযুক্ত কোনও সাহায্য আমরা নেবো না।’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ন্যাপের প্রধান মোজাফফর আহমদ। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আড়তদার, মজুতদার, মুনাফাখোর চোরাকারবারিদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এদেরকে অবশ্যই চরম আঘাত হানা হবে। এরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করার বিষয়ে তৎপর রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জনগণ শক্তির উৎস। দেশের মানুষ এদের প্রতিরোধ করবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গ্রহণ করেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আনতে হবে।’আমাদের দেশের জনগণকে বাঁচাতে হলে সমাজতন্ত্র ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ব্যক্তিগত মালিকানার সুযোগ দিলে সাময়িকভাবে হয়তো অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিছুটা চাকচিক্য দেখা যেতো। কলকারখানা জাতীয়করণের বদলে ব্যক্তিগত মালিকানায় রাখলে চোরাপথে অর্থ সমাগমে এগুলো হয়তো তাড়াতাড়ি চালু হতো এবং কিছু সাময়িক সুবিধে হতো না তাও নয়। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি দেখা দিতো, কিন্তু একবার দেশে ব্যক্তি মালিকানা স্বীকার করে নিলে পরবর্তী পর্যায়ে তাদেরকে প্রতিহত করা কঠিন হয়ে পড়ে। কারণ, এদের সঙ্গে দুনিয়ার পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর একটি স্বাভাবিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।’ তিনি বলেন, ‘সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রথমে জনতাকে দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয়।’