ভয় কাটিয়ে মানুষ ঘরের বাইরে আসুক, চাইছেন বিশেষজ্ঞরা!
প্রকাশিত: ০৩ মে ২০২০, ০৯:০৫
সীমিত আকারের শিল্প, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়াসহ সরকার ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে। রোগতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষ ভয়ে কুঁকড়ে আছে। তাদেরকে ঘরের বাইরে আনা দরকার। তাদের মতে, মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় সর্তকতা অবলম্বন করে বাইরে বের হলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কম। এছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে বের হলে বেশি বেশি নমুনা পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় কি-না তা বোঝা সম্ভব হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির একাধিক সদস্য জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, তাদের মতে, বাংলাদেশে যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে তার তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম মনে হয়েছে। তা নাহলে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত এদেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আরও বেশি হতো। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় ব্যাপকহারে সংক্রমণ দেখা দিত। কারণ বস্তি এলাকার ঘরগুলোতে চাইলেও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বসবাস করা সম্ভব না। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনলাইন হেলথ বুলেটিন প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২ মে পর্যন্ত সারাদেশে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৭৯০ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় ১৭৫ জনের। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭৭ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই ভাইরাসে আক্রান্তদের অধিকাংশই বয়স্ক এবং অন্যান্য বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছেন। যারা মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই বেশি বয়স্ক। তারা আরও বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের নায়েবে আমির মাওলানা জুবায়ের আহমেদ আনসারীর জানাজায় লাখো মানুষের সমাগম হলেও উপস্থিত এলাকার বাসিন্দাদের কারও শরীরে করোনার উপসর্গ মেলেনি। ওই ঘটনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বেড়তলা গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দাদের ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন শনিবার শেষ হয়েছে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, লাখো মানুষের সমাগমের কারণে সেখানে ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটবে কিন্তু এমনটা ঘটেনি। একইভাবে সম্প্রতি সরকারঘোষিত ছুটি প্রায় শেষ হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গার্মেন্টস কর্মীরা দলে দলে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছিলেন। সেখানেও ধারণা করা হয়েছিল, এ কারণে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ ঘটবে। কিন্তু আশঙ্কা অনুপাতে ভাইরাসের তেমন ব্যাপক সংক্রমণ ঘটেনি। রোগতত্ত্ববিদরা বলছেন, চলতি মে মাসটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসেই করোনার সংক্রমণে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হতে পারে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত সরকারি ছুটির সময়সীমা বৃদ্ধি করছে সরকার। তবে সীমিত পর্যায়ে ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা চলছে।