মাফিয়া শব্দটি শুনলেই প্রথমে শরীরটা শিউরে উঠে। অবৈধ এমন কাজ নেই যা মাফিয়ারা করে না। মাফিয়া মানেই অন্ধকার জগত। অথচ এই মাফিয়ারাই করোনা কবলিত ইতালিতে দরিদ্র মানুষদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা খাদ্য, প্রয়োজনীয় পণ্য এমনকি নগদ টাকা দিয়েও সাহায্য করছে মানুষদের। অর্থাৎ এমন বিপদের দিনে তারাও অন্ধকার থেকে আলোর জগতে উঠে এসেছে। যারা মানুষকে লুটে নিতো, তারা মানুষকে এখন বিলিয়ে দিচ্ছে। এর বিপরীতে আমাদের দেশের চিত্রটা কী? হাজারো বস্তা ত্রাণের চাল চুরির খবর গণমাধ্যম জুড়ে। এমন বিপদের দিনে, যেখানে মানুষ রোগ এবং ক্ষুধা দুটোর সামনেই দাঁড়িয়ে। এ দুটোই মৃত্যুর উপসর্গ। মানুষের দুয়ারে করোনা আর অভাব দুটোই মৃত্যুকে সঙ্গে নিয়ে এসেছে। এ অবস্থাতেও চাল চুরি চলছে। ইতালির মাফিয়ারা নস্যি আমাদের এই চাল চোরদের কাছে। মাফিয়াদেরও মানবিকতা আছে, এই চাল চোরদের নেই। মানবিকতার প্রশ্নে আরেকটি কথা বলি। এদেশে এক শ্রেণির সামাজিক পাণ্ডা গজিয়েছে। এরা সব সময়ই গজায়। যেকোন সময়ে গায়ের জোরে সামাজিক পাহারাদার হয়ে উঠে। এরা গৃহবধূকে গাছে বেঁধে পিটায় পরকীয়ার অপরাধে। মোবাইল চুরির অপরাধে বালককে পিটিয়ে মেরে ফেলে। একঘরে করার ফরমান জারি করে। এই সামাজিক পাণ্ডারাই আজ করোনা আক্রান্ত রোগীকে অস্পৃশ্য ঘোষণা করছে। অস্পৃশ্য বলছে সেই আক্রান্তের পরিবারকে। ফলে একদিকে যেমন পরিবারটি রোগে আক্রান্ত, অন্যদিকে আক্রান্ত হচ্ছে চিকিৎসা ও খাদ্য না পাওয়ার শোকে। সামাজিক পাণ্ডাদের জ্বালায় তাদের জীবন হয়ে উঠছে বিষময়। করোনা আক্রান্ত হবার দরকার নেই; সন্দেহেই সামাজিক এসব পাণ্ডা বলছে এলাকা ছেড়ে যেতে। না গেলে বাড়ি-ঘরে হামলা হচ্ছে। বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সে বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা। আর মারা গেলে তো কথাই নেই। লাশ কবর দিতে দেয়া হচ্ছে না। একটা খবর নিশ্চয়ই চোখে পড়েছে সবার, করোনা আক্রান্ত মেয়ের লাশ নিয়ে বাবা নৌকায় বসে আছেন। সেই লাশ দাফন করতে দিচ্ছে না সে গ্রামের সামাজিক পাণ্ডারা। নারায়ণগঞ্জে এক তরুণ গিটারিস্টের লাশ বাসার সামনে পড়ে থাকার পরেও সাত ঘণ্টা কেউ আসেনি সামাজিক পাণ্ডাদের ভয়ে। বলি ভয়টা কিসের! যে হারে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে ওই সামাজিক পাণ্ডারাও আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের আক্রান্ত হবার ভয়টা আরও বেশি। সামাজিক ও গণমাধ্যমে যতটা দেখেছি, তাতে এসব জোটবদ্ধ পান্ডামি যারা করেছেন তাদের সামাজিক তো দূরের কথা শারীরিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই ছিল না।