কিশোরীর বিয়ে ঠিক করেছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় বিয়ে ঠেকাতে পালিয়ে সরকারি অফিসে রওনা দেয় নুরবানু। লকডাউনে যানবাহন কিছু নেই। বাবা, দাদার চোখে পড়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে, তাই বড় রাস্তা ধরেও যাওয়া যাবে না। কিন্তু বিডিও অফিসে যে পৌঁছতেই হবে। ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার প্রদীপডাঙার। বিয়ে ঠেকাতে নুরবানু খাতুন তাই ঘুরপথে এগোয়। একটি অটোরিকশায় নিকটবর্তী ডল্টনপুর পৌঁছায়। চৈত্রের রোদে তখন চারপাশ পুড়ে খাক। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তার মধ্যেই হাঁটতে শুরু করে সে। ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে ১৩ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে হরিহরপাড়া বিডিও অফিসে যখন সে পৌঁছায়, তাকে দেখে আঁতকে ওঠেন বিডিও। সকাল থেকে তার পেটেও কিছু পড়েনি। হাঁটতেও হয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে। উদ্বেগে, পথশ্রমে ক্লান্ত ওই কিশোরী তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে কোনও মতে কেবল বলতে পারে, ‘আমাকে বাঁচান স্যার! আমি পড়তে চাই।’ কিশোরী নুরবানু এবারই নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক দিয়েছে। শুক্রবার রাতে সে জানতে পারে, তার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগেও চেষ্টা হয়েছিল। তখনও সে বলেছিল, পড়তে চায়। চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। বাড়ির লোক শোনেননি। তবে সে যাত্রা সরকারি লোকজনের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায় কিশোরী। তাঁরা বাড়িতে এসে ওই কিশোরীর বাবা-দাদাকে বুঝিয়ে বলেন। তখনকার মতো বাড়ির লোক রাজি হয়ে যান। মুচলেকাও লিখে দেন। এবার করোনাভাইরাসের কারণে প্রশাসনের লোকজনের নজরদারি কম। লকডাউন শুরুর পরে ফের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় কিশোরীর। বিডিও পূর্ণেন্দু সান্যাল বলেন, ‘‘সম্ভবত ভাবা হয়েছিল, লকডাউনের সময় কেউ কিছু জানতে পারবেন না।’’ বিয়ে করবে না জানিয়ে কিশোরী বেঁকে বসে। তাতেই রাগ বাড়ে বাবা-দাদার। ওই কিশোরীর বক্তব্য, ‘আমি কিছুতেই এখন বিয়ে করব না বলায় বাবা-দাদা আমাকে মারধর করে। অপমানে, যন্ত্রণায় সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েছি।’ নুরবানু আর ঘরে ফিরতে চায়নি। তবুও তাকে শেষ পর্যন্ত তার বাড়িতেই এ দিন পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বাবা, দাদা পেশায় কৃষিজীবী। পরিবারের লোকেদের সতর্ক করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিয়ের জন্য জোরাজুরি না করতে। কিশোরীর পড়াশোনার যাবতীয় দায় প্রশাসনের। এলাকায় স্বাক্ষরতার হার বেশ কম।