৬ মার্চ দুপুর একটা পাঁচ মিনিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া দুপুরে এক বেতার ভাষণে ঢাকায় ২৫ মার্চ পুনরায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন। তিনি এতদিনের আন্দোলনকে গুটিকয়েক ব্যক্তির কাজ বলে উল্লেখ করেন। তার বক্তব্য বাঙালির মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। ঢাকার রাজপথ এদিন স্বাধীনতাকামী জনতার দৃপ্ত পদচারণায় প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। উত্তেজিত জনতা চিৎকার করে বলতে থাকে_ ‘রক্ত চাও নেবে তবু স্বাধিকার দিতেই হবে’। সারাদিন ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত হরতাল ছিল। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি হলো। সশস্ত্র-বাহিনীর ট্রাক আর অ্যাম্বুলেন্স ঘন ঘন যাতায়াত করছিল। কিন্তু বন্ধ ছিলোনা মুক্তিকামী বাঙালির মিছিল, মিটিং। স্লোগান উঠেছিলো ‘জয় সর্বহারার জয়, জয় বিদ্রোহী বাংলার জয়, জয় নিপীড়িত মানুষের জয়’। একটি স্লোগান সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হতে থাকলো ‘ভুট্টোর মুখে লাথি মারো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ পহেলা মার্চের পর থেকে গুলিবিদ্ধ লাশের সংখ্যা বাড়তে থাকে। রংপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর আর ঢাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য মূলতবী ঘোষণা করার পর থেকেই শহর বন্দর আর গ্রামে গ্রামে বিক্ষোভ-জনসভা। ৬মার্চ সাপ্তাহিক ‘স্বরাজ’ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলো ‘চাকা বন্ধঃ কারফিউঃ বুলেটঃ হত্যা’ (স্বরাজের নিজস্ব প্রতিনিধি। শত শত মানুষ নিহত হওয়ার পর, মিছিল, মিটিং, কারফিউ ভঙ্গ, প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের পর ৭মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান কি ঘোষণা দেন; তাই জানার জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে রইল মুক্তিকামী বাঙালি।