১৯৭১ সালের এপ্রিল। পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া, সূত্রাপুর এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা পাকিস্তানি সেনার ভয়ে পালিয়েছেন। কিন্তু টলানো যায়নি অশীতিপর যোগেশ বাবুকে। ২১ নম্বর দিননাথ সেন রোডে বিশাল জায়গা জুড়ে তার বাড়ি আর আয়ুর্বেদিক ওষুধের কারখানা। কারখানার প্রতিটি ইটের সঙ্গে তার আত্মার সম্পর্ক। চরম অশান্ত আবহে বাড়ির সবাইকে কলকাতায় পাঠিয়ে নিজে ভিটে আঁকড়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সতেরো বছরের পুরনো দুই বিশ্বাসী দারোয়ান সুরজ মিঞা আর রামপাল। ৩ এপ্রিল গভীর রাতে একটা মিলিটারি জিপ এসে থামল বাড়ির সামনে। ৫-৬ জন সশস্ত্র পাক সেনা লাফিয়ে নেমে, বাইরের ফটকের তালা ভেঙে শুরু করল গুলিবৃষ্টি। সুরজ মিঞা পাল্টা গুলি ছুড়লেন। অসম লড়াই, তবু কেমন যেন ঘাবড়ে গেল সেনারা। জিপে উঠে চলে গেল। সুরজ অভিজ্ঞ মানুষ। বুঝলেন, আহত বাঘ আবার ফিরবে। তাই হাত জোড় করে পালিয়ে যেতে বললেন বৃদ্ধ মনিবকে। কিন্তু যোগেশ বাবু অনড়। ‘মরতে হয় তো এ দেশের মাটিতেই মরব।’ পরদিন সকালেই দ্বিগুণ সদস্য আর অস্ত্র নিয়ে ফিরে এল পাক সেনারা। রাইফেলের মুখে সুরজ, রামপাল ও যোগেশ বাবুর বিশ্বস্ত কিছু কর্মচারীকে দাঁড় করিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেল। সেখানে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে-খুঁচিয়ে, তার পর গুলি করে মারা হল যোগেশচন্দ্র ঘোষকে। লুট হল তার বাড়ি, কারখানা। সেই যোগেশচন্দ্র, যিনি সূত্রাপুরে ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আয়ুর্বেদিক ওষুধের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘সাধনা ঔষধালয় (ঢাকা)’।