নদীবেষ্টিত পুরো বরিশাল বিভাগে অহরহ চলছে অনুমোদনবিহীন অবৈধ ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের জলযান। যদিও এরমধ্যে বাল্কহেড নিয়েই বেশি আতঙ্কে থাকেন এ অঞ্চলে যাত্রীবাহি নৌযানগুলোর চালক ও মাস্টাররা। কারণ হরামেশা নদীতে যেসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে তার বেশিরভাগ ঘটনাতেই বাল্কহেড থাকছে, এরপর রয়েছে কার্গোর অবস্থান। বৈধ নৌযানের চালক ও মাস্টারদের দাবি, সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না নদীপথে চলাচলরত অবৈধ নৌযানগুলোর বিরুদ্ধে। তবে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর বরিশালের কর্মকর্তাদের দাবি, তারা অনুমোদনবিহীন ও অবৈধ জলযানের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখে জরিমানার পাশাপাশি মেরিন আইনে মামলাও ঠুকে দিচ্ছেন। জনবল সংকট এবং যথেষ্ট তদারকির অভাবে অবৈধ বাল্কহেডের পাশাপাশি কার্গোসহ ছোট-বড় বিভিন্ন মলবাবাহি নৌযান দেদারছে যাতায়াত করছে বরিশালের নদী পথগুলোতে। জানা যায়, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, আঁড়িয়াল খা, কারখানা, পায়রা, ইলিশা, কীর্তনখোলা, মেঘনা, লোহালিয়া, তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, বিষখালি, বলেশ্বর, কালাবদর, বুড়াগৌড়াঙ্গ, আন্ধারমানিকসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী রয়েছে বরিশাল বিভাগে। যেসব নদী ব্যবহার করে শুধু অভ্যন্তরীণ রুটেই নয়, দূরপাল্লা এবং ভারতের যাত্রীবাহি ও মালিবাহি নৌযানগুলো চলাচল করে। বিভাগের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার পাশাপাশি দেশের একস্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্য পরিবহন করার কাজে বড় আকারের ট্রলার, বাল্কহেড ও কার্গোগুলো ব্যবহার হচ্ছে। তবে অভিযোগ রয়েছে, রাতের বেলা এমনকি অনেক সময় দিনের বেলায়ও কৌশলে অবৈধ (সার্ভে সনদ বিহীন) কার্গো ও বাল্কহেড চলাচল করে থাকে বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদী দিয়ে। আর এসব নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযানে নামলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবৈধগুলো চোঁখের আড়ালে চলে যায়। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, অভিযানগুলো দিনের বেলা চালানো হয় কিন্তু অবৈধ এসব নৌযান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রাতের বেলা চলাচল করে। আবার অভিযানিক দপ্তরের রয়েছে জনবল সংকটও। সেক্ষেত্রে বিভাগের কোনো এক নদীতে অভিযান চালিয়ে যদি দুটি অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাহলে অন্য রুট দিয়ে চলে যায় আরও ১০টি। তাই নিরাপত্তাবাহিনীর সমন্বয়হীনতার অভাবে চালানো অভিযানগুলোও হয় ধীরগতিতে। জানা গেছে, নৌ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা অবৈধ নৌযানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে যে দফতরটির (নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে) তার একটি কার্যালয় রয়েছে বরিশাল নদী বন্দর সংলগ্ন এলাকায়। যেখানে বিআইডব্লিউটিসির ভবনের একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আর বরিশাল সদর ছাড়া বিভাগের অন্য কোনো জেলায় অভিযান পরিচালনা করতে হলে এখান থেকেই কর্মকর্তাদের ছুটে যেতে হয়। এছাড়া জালের মতো ছড়িয়ে থাকা বিশাল নদী বেষ্টিত এলাকায় দফতরটির ইন্সপেক্টরও রয়েছেন মাত্র দুইজন। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, এভাবেই গত এক বছরে পুরো বরিশাল বিভাগে ৮টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। বছরব্যাপী অভিযানগুলোতে ১৮০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২২ লাখ টাকা। তাছাড়া ১০০টি কার্গো এবং বাল্কহেড আটক করা হয় এই অভিযানে। এর বেশিরভাগেরই কোনো সার্ভে সনদই ছিল না।