সবশেষ ২০১৬ শিলং-গৌহাটি গেমসে মাবিয়া ৬৩ কেজিতে সোনা জেতেন। সেবার তুলেছিলেন ১৪৯ কেজি। ভারোত্তোলনের ইতিহাসে বাংলাদেশের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের সেটিই ছিল প্রথম স্বর্ণ জয়। এবার দেশের প্রথম নারী ভারোত্তোলক হিসেবে টানা দুই এসএ গেমসে স্বর্ণ জয় করে ইতিহাস লিখলেন মাবিয়া। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের টানা দুই আসরে স্বর্ণ এটিই প্রথম। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমসে প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে স্বর্ণ জয় করেন শুটার কাজী শাহানা পারভীন। মেয়েদের ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড রাইফেল ইভেন্টে স্বর্ণ জিতেন তিনি। পরের আসরেও স্বর্ণ জয় করেছিলেন কাজী শাহানা পারভীন। তবে সেটি দলগত ইভেন্টে। এ ছাড়া সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শীলা ২০১৬ এসএ গেমসে এক আসরেই দুই স্বর্ণ জয়ের ইতিহাস গড়েছিলেন। দু’টিই ছিল ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে। ব্যক্তিগত কারণে এবার অনুপস্থিত শিলা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই পর পর দুই আসরে সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন এই ভারোত্তোলক। ভারোত্তোলনে গতকাল আরো একটি স্বর্ণ এসেছে। ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্বর্ণ জেতেন জিয়ারুল ইসলাম। দুপুরে কাঠমান্ডুতে ফেন্সিংয়ে সোনা জিতেছেন ফাতেমা মুজিব। ব্যক্তিগত সাবরে ইভেন্টে সোনা জেতেন এই ফেন্সার। এর আগে তায়কোয়োন্দো থেকে দিপু চাকমা, কারাতের হোমায়রা আক্তার, মারজান আক্তার ও আল আমিন এসএ গেমসে সোনা জেতেন নেপালে।নেপালে এসএ গেমসে চারটি সোনা জিতে যেন থমকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই চারটি সোনার পদকই এসেছিল কাঠমান্ডু থেকে। অবশেষে গতকাল সকালে পোখরা থেকে সোনা জয়ের সুখবর এলো। পোখরার এসআরকেসি ব্যানকুয়েটে সোনা জয়ের লড়াইয়ে স্ন্যাচে মাবিয়া তিন লিফটে তোলেন ১০৫ কেজি। সেখানে প্রিয়ান্থি তোলেন ১০১ কেজি। এরপর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে মাবিয়া তিন লিফটে তোলেন ১৮৫ কেজি। প্রিয়ান্থি তোলেন ১৮৪ কেজি। তাতে সোনা জয় নিশ্চিত হয়ে যায় মাবিয়ার। এই বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতেন নেপালের তারা দেবী পুন। এর আগে মাবিয়া ২০১৬ সালে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জিতেছিলেন। গৌহাটির ওই আসরের বিজয়মঞ্চে জাতীয় সংগীত বাজার সময় আবেগাপ্লুত মাবিয়া নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি। লাল-সবুজ পতাকাটি যখন ধীরে ধীরে ওপরের দিকে উঠছিল, মাবিয়া তখন পতাকার দিকে তাকিয়ে স্যালুটের ভঙ্গি করে কাঁদছিলেন। জাতীয় সংগীতের মধুর সুর-মূর্ছনার সমাপ্তি ঘটার আগ পর্যন্ত তিনি একইভাবে কেঁদে গেছেন। এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ‘ভাইরাল’ হয়েছিল। গতকাল টানা দ্বিতীয় বারের মতো বিজয়ের মঞ্চে আবেগী মাবিয়া আর কাঁদেননি, জাতীয় সংগীমের মধুর মূর্ছনার সময় বুকে হাত দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন তাকিয়ে ছিলেন পতাকার দিকে। পুরস্কার বিতরণী শেষে মাবিয়া বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস ছিল। কোচ ও ফেডারেশন আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। নিজের প্রতি আমার যা বিশ্বাস ছিল, তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস আমার প্রতি ছিল ফেডারেশন ও কোচদের। এই পদক আমি তাদের উৎসর্গ করছি। তাদের আশা পূরণ করতে পেরেছি, ভালো লাগছে। দেশের সবার প্রত্যাশা ছিল আমাকে নিয়ে। সেটা পূরণ করতে পেরেছি।’ ‘ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যদি আমাদের সুযোগ-সুবিধার ওপর জোর দেয়; তাহলে আমরা যেকোনো প্রতিযোগিতায় পদক এনে দিতে পারব। কারণ, আমি এসএ গেমসের ক্যাম্প করেছি চার-পাঁচ মাস। তাতেই স্বর্ণ জিততে পেরেছি। যদি দুই বছর ক্যাম্প করার সুযোগ পাই; তাহলে যেকোনো প্রতিযোগিতাতেই আমরা পদক এনে দিতে পারব। আমার পরবর্তী টার্গেট অলিম্পিক’- যোগ করেন মাবিয়া। চার বছর আগের অচেনা মাবিয়া এক স্বর্ণ জিতেই রাতারাতি তারকা খ্যাতি পেয়ে যান। স্বাভাবিকভাবেই চারবছর আগের মাবিয়ার সঙ্গে এই মাবিয়ার তফাৎ ছিল বিস্তর। তার ওপর প্রত্যাশাও ছিল বিস্তর। আকাশ ছোঁয়া চাপ নিয়েই কাল ওজন ওঠান মাবিয়া। ওজন শ্রেণি বদলে সোনাজয়ী মাবিয়া বলেন, চারবছরের ব্যবধানে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে আমার ওজনও বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই আমার ওজন ক্যাটাগরিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। ভারোত্তোলনে ভারত অংশ না নেয়ায় সোনা জেতা সহজ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না,এমনটা মনে করছি না। আমরা সবাই ভারতকে নিয়ে মাথা ঘামালেও শ্রীলঙ্কা কিন্তু অনেক ভালো খেলেছে, তারা কিন্তু মোটেও পিছিয়ে নেই। তাদের হারিয়েই আমাকে জিততে হয়েছে। তাদেরকে মোটেও গণনার বাইরে রাখা যাবে না। অসাধারণ খেলেছে তারা।’ মাবিয়ার সোনা জয়ের দিনে ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জেতেন জিয়ারুল। স্বাগতিক নেপালের ভারোত্তোলক বিশাল সিংকে হারিয়ে সোনা জেতেন তিনি। স্ন্যাচে ১২০ কেজি ওজন তোলেন তিনি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তোলেন ১৪২ কেজি। এরপর ফেন্সিংয়েও বাংলাদেশকে সোনার পদক এনে দিয়েছেন ফাতেমা মুজিব। মেয়েদের একক সাবরে ইভেন্টে সোনা জেতেন তিনি।