ধানের মূল্যে ভরাডুবিতে হাওরের বোরো জমি চাষে অনুৎসাহ প্রকাশ করছেন কৃষকরা। এতে জমির মালিকরা তাদের ন্যায্যমূল্যে জমি দিতে পারছে না বিধায় গ্রাহক শূন্যতায় ভুগছেন। কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার অধিকাংশ হাওরের জমি পানির ধারেরও বোরোজমি চাষের কৃষক নিতে চাচ্ছে না। এতে অষ্টগ্রাম হাওরের অধিকাংশ জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। একটি মাত্র এক ফসলি বোরো চাষের উপর নির্ভর করে এই বিশাল হাওরের জনগোষ্ঠী। যা থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থানসহ সকল কিছুই নির্ভর করে। অষ্টগ্রাম প্রায় ২৪টি হাওরের আবাদি জমি রয়েছে ২৬ হাজার ৩০ হেক্টর। যাহার উৎপাদনের বোরো ধানের পরিমাণ ২ লাখ ৪১ হাজার ৪৫ মেট্রিক টন। অনাবাদী জমির পরিমাণ রয়েছে প্রায় ১ হাজার হেক্টর। প্রতিবছর হাওরের কৃষক এই ধান ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করে নতুন করে আবার চাষাবাদ শুরু করেন। কিন্তু অধিকাংশ গৃহস্থের বা কৃষকের ঘরে বিপুল পরিমাণ ধান সংরক্ষিত রয়েছে আবার অন্যদিকে ঋণে জর্জরিত কৃষক। বাজারে ধানের মূল্যে না থাকায় বেশিরভাগ কৃষকেই লোকসান দিয়ে বোরো চাষ করতে অনিচ্ছুক। গত ২১শে জুন সারা দেশে একযোগে উপজেলা খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান ক্রয় হলেও প্রকৃত কৃষকেরা ধান দিতে পারেনি কারণ অধিকাংশ ছোট বড় চাষিদের কৃষিকার্ড নেই। এতে প্রকৃত কৃষকেরা ধান দিতে না পারায় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর অন্যদিকে সুবিধা নিচ্ছে কার্ডধারী কিছু সংখ্যক অসাধু কৃষক, যাদের হাওরে এক খণ্ড জমি নেই। এই প্রথম হাওরের বোরো ধান চাষের কৃষকেরা অলস দিন পার করছেন। একজন বিএডিসি বীজ ডিলার বকুল মিয়া জানান, তার কাস্তুল ইউনিয়নে বিগত দিনে যেখানে ৬ হাজার বস্তা বীজ বিক্রি হতো সেখানে ১৬শ’ বস্তা বীজ নিয়ে হিমশিম। এভাবে উপজেলার বিএডিসি লাইসেন্সধারী সব বীজ ডিলাররা মাল নিয়ে মুখ থুবরে পড়ে আছে। কারণ যেখানে এক একর জমিতে চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়, সেখানে উৎপাদিত ধানের মূল্য বর্তমান বাজার ধরে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এভাবে বাজারে ধানের মূল্যে থাকলে দিন দিন হাওরের কৃষক বোরো চাষে অনুৎসাহ থাকলে একদিন আবাদি জমি অনাবাদিতে পরিণত হবে।এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি হাওরের কৃষকের বিভিন্ন দিক গবেষণা করে জানতে পারেন ধানের ন্যায্যমূল্য, সেচ প্রকল্পের সীমিত চার্জ, হালচাষের জন্য ডিজেল ভর্তুকি সঠিকভাবে সহজলভ্য না থাকলে অচিরেই হাওর একদিন অনাবাদি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা পোষণ করছেন।