শ্রীলঙ্কায় ঐক্য স্থাপন কঠিন হবে আতঙ্কে সংখ্যালঘুরা

মানবজমিন প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ। নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। তিনি সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাই। মাহিন্দই এবার তার ভাইয়ের অধীনস্থ নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। গোটাবাইয়ার বিজয় নিয়ে উল্লসিত নেতাকর্মীরা। কিন্তু ধর্মীয়, অর্থনৈতিক সহ নানা কারণে বিভক্ত শ্রীলঙ্কায় ঐক্য স্থাপন হবে খুব কঠিন কাজ। ইসলামপন্থি জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার সাত মাস পরেও শ্রীলঙ্কা এখনো এক অভিঘাতের মধ্যে রয়েছে। হামলায় এই দ্বীপ রাষ্ট্রটির ভঙ্গুর সাম্প্রদায়িক সম্পর্ককে ছিন্নছিন্ন করে দিয়েছে। এতে সরকারের প্রতি জনগণের আস্থায় চূড়ান্ত আঘাত করেছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে এই আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শনিবার শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নির্বাচন ও তার পরবর্তী দৃশ্যপট নিয়ে এক প্রতিবেদনে অনলাইন বিবিসিতে এসব কথা লিখেছেন সাংবাদিক জিল ম্যাকগিভারিং। রাজধানী কলম্বো থেকে তিনি লিখেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ গোটাবাইয়ার এই বিজয়কে নীরবে, আতঙ্কের মধ্যদিয়ে নেবে। এসব মানুষ ভোট দিয়েছিলেন গোটাবাইয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসাকে। তারা প্রেমাদাসাকে অধিক উদার হিসেবে দেখে থাকেন। সবার পছন্দকে আমলে নেন প্রেমাদাসা। বহু মুসলিম বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত ঘৃণা জোরালো হয়েছে। এতে উস্কানি দিচ্ছে কট্টরপন্থি বৌদ্ধ গ্রুপগুলো। গত সাত মাসে তা আবার দেখা দিয়েছে। মুসলিমরা বলছেন, তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বর্জন করা হয়েছে। এমন কি তাদেরকে প্রকাশ্যে রাস্তায় অবমাননা করা হচ্ছে। অনেকেই প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পান। তারা আস্থার সঙ্গে বলেছেন, রাজাপাকসের বিজয় নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষা করে চলেন রাজাপাকসে- এমনটাই বেশি মনে করা হয়। মুসলিম বিরোধী উগ্রপন্থিদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য তার সমালোচনা করা হয়েছে। নির্বাচনের আগে একজন মুসলিম নারী উদ্বেগের সঙ্গে তার মত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছিলেন, যদি নির্বাচনে গোটাবাইয়া রাজাপাকসে বিজয়ী হন তাহলে সামনের দিনগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পাবো। এসব সাম্প্রদায়িক গ্রুপগুলোর বেশির ভাগেরই যোগসূত্র রয়েছে তার দলের সঙ্গে। ওদিকে গোটাবাইয়া রাজাপাকসের বিজয়ের খবর প্রকাশ হতেই তার দলের প্রধান কার্যালয়ে ছুটে যেতে থাকেন সমর্থক ও দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে ছিল সতর্কতা। এ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে রাজাপাকসে পরিবার ক্ষমতায় ফেরায় অনেকেই স্বস্তি পেয়েছেন। শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় এখন যারা এলেন তাদের জন্য এটা যেন একটি পারিবারিক বিষয় হয়ে উঠলো এখন। বিজয়ী গোটাবাইয়ার ভাই সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে। তিনি ১০ বছর শ্রীলঙ্কার ক্ষমতায় ছিলেন। নতুন সরকারে তাকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচনে দু’ভাইয়ের ছবি ও ব্যানার পাশাপাশি দেখা গেছে। রাজাপাকসের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন এবার আইনজীবীদের একটি গ্রুপ। তাদের একজন সাগালা অভয়াবিক্রমে। তিনি বলেছেন, এটা আমাদের বিজয়ের দিন। চার বছর ধরে আজকের এই দিনটির জন্য আমরা কাজ করেছি। তিনি গোটাবাইয়ার প্রতি আস্থাশীল। মনে করেন, তিনি যা করতে চান তিনি তা করতে পারেন। তার ভাষায়, তাকে আমরা দেখেছি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে। তিনিই ৩০ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধকে খতম করে দিয়েছেন। ১০ বছর আগে বিদ্রোহী তামিল টাইগারদের আন্দোলনকে পরাজিত করার বিষয় উল্লেখ করে তিনি এ কথা বলেন। তামিল বিরোধী সরকারের অভিযান নিয়ে মারাত্মক সব অভিযোগ আছে। বলা হয়, এতে যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়েছে সরকার। তা সত্ত্বেও ওই যুদ্ধ শেষে এর কৃতিত্ব দেয়া হয় টিম রাজাপাকসেকে। তিনি ক্ষমতায় থাকলে ইস্টার সানডে’র মতো ঘটনা ঘটতো না। গোটাবাইয়া রাজাপাকসের আরেকজন সমর্থক আইনজীবী জানাকা অরুণাশান্থা বলেন, আমি মনে করি শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে এটা হলো একটি টার্নিং পয়েন্ট। দেশের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সবকিছুতে আগামী ৫ বছর উন্নতি হবে বলে মনে করি। গোটাবাইয়াকে নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। নির্বাচনের পর রোববার রাজধানী কলম্বোর রাজপথ ছিল ফাঁকা। নির্বাচনের খবর যখন প্রকাশ পাচ্ছিল তখন চারদিকে এক পিনপতন নিস্তব্ধতা নেমে আসে। বিক্ষোভ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। রাজনৈতিক নেতারাও সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এরই মধ্যে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ঐক্য ধরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখানে রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদিও আছে, তথাপি নির্বাচনের ফল বলে দেয় দেশটি কতটা মেরুকরণ হয়েছে। এখানে ঐক্য স্থাপন খুব কঠিন হবে।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us