‘আব্বা তোমরা এসে আমাকে নিয়ে যাও- না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। দেরি করলে হয়তো তোমরা আমার মুখ দেখতে পারবা না।’ মৃত্যুর আগে মুক্তিযোদ্ধা কন্যা ফাতেমা বেগম এ মেসেজ পাঠায় তার মায়ের কাছে। কিন্তু পরদিন গিয়ে আর সত্যিই তার মুখ জীবিত অবস্থায় দেখতে পায়নি। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পূর্ব দীঘলকান্দি চরে। বীর মুক্তিযোদ্ধা বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ জানায়, গেল ২৬শে আগস্ট তার মেয়ে ৮ম শ্রেণি পড়ুয়া ফাতেমা বেগম নিখোঁজ হয়। এ বিষয়ে সাঘাটা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। তারপর ২২শে সেপ্টেম্বর তারা জানতে পারেন যে তার মেয়েকে একই এলাকার মাস্তান ও বখাটে আব্দুল মতিন তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে বিয়ে করে। বিষয়টি জানার পর ফাতেমার বাবা মায়ের পক্ষ থেকে অপহরণকারী আব্দুল মতিনের অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় মীমাংসার জন্য। সামাজিকভাবে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দিলে তারা বিয়ের জন্য ২ লাখ টাকা দাবি করেন। সামাজিকভাবে বিয়ে করতে হলে ২ লাখ টাকা দিতে হবে। দিলে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে সম্মত হয়। এই টাকা না দেয়া ও সামাজিকভাবে মীমাংসা না করে আব্দুল মতিন ফাতেমাকে মারপিট করে এবং বলে যে তোর বাপ টাকা না দিলে তোকে মেরে ফেলবো। এই বলে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতনের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ফাতেমা গোপনে মোবাইল ফোনে তার বাবার কাছে ম্যাসেজ লিখে বলে আমাকে বাঁচাও। ওরা আমাকে প্রতিদিন নির্যাতন করে টাকার জন্য। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। যত দিন যাচ্ছে ওরা আমাকে নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। বেশিদিন হয়তো বাঁচবো না। তাড়াতাড়ি এসে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। এই ম্যাসেজ পেয়ে ফাতেমার ভাই তাদের স্বজনদের নিয়ে তার বোনকে আনতে যায়। কিন্তু পাষণ্ড স্বামী শ্বশুর তাকে আসতে না দিয়ে সবার সামনেই মারপিট করে বলে সে এখন আমাদের ঘরের বউ। আমরা যখন যেতে বলবো তখন সে যাবে। সেই যাওয়া বা আসা আর হয়নি। ফাতেমার আর বাড়ি আসা হয়নি। গত ১৩ই নভেম্বর ফাতেমাকে তারা বাপের বাড়ি থেকে ২ লাখ টাকা আনতে বলে। তাদের কথা ২ লাখ টাকা নিয়ে এলে তাকে বাড়ি যেতে দেয়া হবে। কিন্তু ফাতেমা বাপের কাছে ২ লাখ টাকার কথা জানালেও তারা এই টাকা আনতে ব্যর্থ হয়। ফলে রাগে ক্ষোভে ফাতেমার কথিত স্বামী আব্দুল মতিন, শাশুড়ি মমতা বেগমসহ কয়েকজন মিলে ফাতেমাকে বেদম মারপিট করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাতে খাবার না দিয়ে দরোজা বন্ধ করে রাখে। ওই রাতেই তার মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে পাষণ্ড স্বামী আব্দুল মতিনসহ বাড়ির সবাই ফাতেমার মরদেহ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের মধ্যে ধরনার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। পরদিন সকালে ফাতেমা আত্মহত্যা করেছে বলে তার বাড়িতে খবর দিয়ে বাড়ি থেকে সবাই পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ফাতেমার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি হিসাবে লিপিবদ্ধ করে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদের অভিযোগ আমার মেয়েকেও হারালাম। পুলিশ মামলাও নিল না। আমরা কি তাহলে আমার মেয়ে হত্যার বিচার পাবো না। নিহতের ভাই আব্দুল মালেক অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ মামলাটি নিয়ে গড়িমসি করছে। আমার বোনকে হত্যা করা হলেও অস্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে থানায় ডায়েরি করা হয়। বলা হয় মেডিকেল রিপোর্ট এলে বিষয়টি দেখা যাবে। অন্যদিকে সাঘাটা থানার ওসি বেলাল হোসেন বলেন, ঘটনার দিনেই হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।