শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু, মূল লড়াইয়ে রাজাপাকসে-প্রেমাদাসা
প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
টানা ছয় সপ্তাহের নির্বাচনী প্রচারণা শেষে শনিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। দেশটিতে ধর্মীয় উত্তেজনা ও অর্থনীতির কঠিন অবস্থার ভেতরেই এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রেকর্ড ৩৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতে মূল লড়াই হচ্ছে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও দু’বারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাই গোটাবাইয়া রাজাপাকসে এবং ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সাজিথ প্রেমাদাসার মধ্যে। বলা হচ্ছে, তাদের একজন অন্যজনের কাঁধের ওপর গরম নিঃশ্বাস ফেলছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। দেশের ২২টি নির্বাচনী জেলায় ১২৮৪৫টি ভোটকেন্দ্রে বৈধ এক কোটি ৫৯ লাখ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। শ্রীলঙ্কায় ঐতিহাসিকভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেয়ার হার খুব বেশি। এর আগে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫ সালে। তাতে ভোট দিয়েছিলেন কমপক্ষে শতকরা ৮১.৫ ভাগ ভোটার। সেই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তবে তিনি এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না। তার দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) সমর্থন করছে গোটাবাইয়া রাজাপাকসেকে। অন্যদিকে নিজের দলের প্রার্থী প্রেমাদাসাকে সমর্থন করছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। গত বছর অক্টোবরে এই প্রধানমন্ত্রীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। কিন্তু তাতে সফল হননি তিনি। রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং কৌশলের কাছে হেরে যান সিরিসেনা। সদর্পে ক্ষমতায় ফেরেন রনিল বিক্রমাসিংহে। নির্বাচনী প্রচারণায় গোটাবাইয়া রাজাপাকসে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মোকাবিলা করতে শক্তিশালী ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি ২৬ বছর ধরে চলমান তামিল বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিজে সফল হয়েছেন বলে প্রচারণায় জোর দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে তিনি শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। তবে ওই সময়ে সংঘটিত জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য অনিয়মের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই গৃহযুদ্ধের শেষ কয়েক মাসে কমপক্ষে ৪০ হাজার তামিলকে হত্যা করা হয়েছে। গোটাবাইয়া রাজাপাকসে বলেছেন, তিনি নির্বাচিত হলে নতুন প্রধানমন্ত্রী করবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে। কিন্তু মাহিন্দ রাজাপাকসের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। তিনি দু’দফা ক্ষমতায় ছিলেন। এ সময়ে তিনি ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের মতে, এ বছর শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে শতকরা ২.৭ ভাগে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া ইস্টার সানডে’তে আত্মঘাতীয় হামলায় নিহত হন বাংলাদেশি সহ কমপক্ষে ২৬৯ জন। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে এক চরম আতঙ্ক বিরাজমান। এমন এক পরিস্থিতিতে সেখানে নির্বাচন হচ্ছে। রাজধানী কলম্বোতে বসবাসকারী শ্রীয়ানি গ্যামেজ (৫৬) বলেন, শ্রীলঙ্কায় জীবন ধারণের খরচ এবং অর্থনৈতিক অবস্থা- এ দুটিই হবে সবচেয়ে বড় নির্বাচনী ইস্যু। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। দেশটি এখন খুব বেশি সফলতা হারিয়েছে।