মন্দিরের গ্রাম হিসেবে খ্যাত নন্দীরহাট। চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি মহাসড়কে হাটহাজারী থানার অন্তর্গত ঐতিহাসিক ও পুরাকীর্তির প্রাচীন নন্দীরহাট গ্রাম। বৃটিশ আমলে এই গ্রামে বেশ কয়েকজন জমিদার বাস করতেন। জমিদারদের রাজবাড়ির পাশাপাশি ছিল তাদের তৈরি নানা মন্দির। সে কারণেই এ গ্রামকে মন্দিরের গ্রাম হিসেবে অভিহিত করা হয়। আর এ নন্দীরহাট গ্রামের একটি ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি লক্ষ্মীচরণ সাহার জমিদার বাড়ি। এ জমিদার বাড়িটি সত্য সাহার জমিদার বাড়ি হিসেবেও পরিচিত। প্রায় ৫ একর জায়গার উপর দুই গম্বুজ বিশিষ্ট এ জমিদার বাড়ি নির্মিত হয় ১৮৯০ সালে। জমিদার শ্রী লক্ষ্মীচরণ সাহা বাড়িটি নির্মাণ করেন। জমিদার লক্ষ্মীচরণ সাহা, মাদল সাহা ও নিশিকান্ত সাহা এ জমিদারীর সূচনা করেন। পরে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত জমিদারী দেখাশোনা করেন লক্ষ্মীচরণ সাহার বড় ছেলে প্রসন্ন সাহা। ১৯৩৪ সালের ২৫শে ডিসেম্বর সত্য সাহার জন্ম হয় এ জমিদার বংশে। একুশে পদক প্রাপ্ত খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক ও সুরকার সত্য সাহার নামেই এখন জমিদার বাড়িটি পরিচিত। ঐতিহাসিক এ বাড়িটিতে এক সময় সিনেমার শুটিং ও হয় একুশে পদক প্রাপ্ত খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক ও সুরকার সত্য সাহার প্রযোজনায় ১৯৭৫ সালে ‘অশিক্ষিত’ সিনেমার দৃশ্য ধারণ চলে এ রাজবাড়িতে। সত্য সাহারা ছিল ১২ ভাই। এ বাড়িতে প্রায় ১শ’ কর্মচারী ছিল। প্রাচীন ঐতিহ্য সম্বলিত এই বাড়িটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে। বাড়িটির চারদিকে রয়েছে ফসলি জমি, গাছগাছালি ও তিনটি পুকুর। এ ছাড়া আছে একটি দোতলা কাচারি ঘর, একটি বিগ্রহ মন্দির ও দুইটি বাসভবন। দৃষ্টিনন্দন এ জমিদার বাড়িটি কালের প্রবাহে জরাজীর্ণ হলেও এর ভাবগম্ভীর ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য এখনো বিদ্যমান। জমিদার ভবনের দেয়াল ও কার্নিশগুলো নানা কারুকাজে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তোলা হয়েছে। কাঠের ছাদের বাড়িটির দুই পাশে আছে দুটি গম্বুজ।যেভাবে যাবেন: চট্টগ্রামের দামপাড়া বা জিওসি মোড় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী ৩ নাম্বার বাসে করে নন্দীরহাট নামতে হবে। নন্দীরহাটের পশ্চিম পাশে দিয়েই জমিদারবাড়ি অভিমুখ রাস্তা। হেঁটে পৌঁছতে সময় লাগবে ১০ মিনিট। যেতে পারেন সিএনজিতেও। যাওয়ার পর হাতের ডান পাশেই দেখবেন এই জমিদারবাড়ি। এখানে নন্দীরহাট গ্রামে বেশ কয়েকটি পুরাকীর্তি স্থাপনা রয়েছে। দেখতে পারেন সে সবও। শ্রী শ্রী লোকনাথ মন্দির (চট্টগ্রাম কেন্দ্র) রামঠাকুরে নাম্বার মন্দির, রাধাকৃষ্ণ জিউর মন্দিরসহ আরো অনেক মন্দির আছে আপনি চাইলে ঘুরে আসতে পারেন।