ভারতীয় স্বার্থ রক্ষায় ৬৫ দেশে সক্রিয় ২৬৫টি ভুয়া ওয়েবসাইট
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ভারতের কূটনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে বিশ্বজুড়ে ৬৫টি দেশে সক্রিয় রয়েছে ২৬৫টি ভুয়া নিউজ ওয়েবসাইট। সম্প্রতি কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন রদ করার পর বিশ্বজুড়ে এ বিষয়ে ভারতের পক্ষে সমর্থন জোগাতে কাজ করেছে ওয়েবসাইটগুলো। এগুলো ভারতীয় নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, বেলজিয়াম ও সুইডেনসহ বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও আইনপ্রণেতাদের প্রভাবিত করতে এসব ভুয়া সংবাদ-ভিত্তিক ওয়েবসাইট পরিচালিত হচ্ছে। এগুলো পরিচালনা করছে ভারতীয় নেটওয়ার্ক। সম্প্রতি এনজিও ইইউ ডিজইনফোল্যাবের এক অনুসন্ধানে এমনটা বেরিয়ে এসেছে। এ খবর দিয়েছে দ্য হিন্দু ও কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া।ইইউ ডিজইনফোল্যাবের অনুসন্ধান অনুসারে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া স্থানীয় পত্রিকার নামে ভারতীয় নেটওয়ার্ক পরিচালিত এসব ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোর নামকরণ করা হয়। এছাড়া সক্রিয় গণমাধ্যমের নামেও চালানো হয় একাধিক ভুয়া ওয়েবসাইট। এই ওয়েবসাইটগুলো কেসিএনএ, ভয়েস অব আমেরিকা ও ইন্টারফেক্সের মতো বিভিন্ন বার্তা সংস্থা থেকে সংবাদ নিয়ে তা পুনরায় প্রকাশ করে থাকে। এরকম কয়েকটি ওয়েবসাইট হচ্ছে, দ্যমিররঅবঅস্ট্রেলিয়াডটকম, দ্যটাইমসঅবসিলনডটকম, দ্যহুভারগেজেটডটকম, মিয়ামিভ্যালিচ্যানেলডটকম, টাইমসঅবজেনেভাডটকম ও দ্য ডাবলিনগেজেটডটকম। এছাড়া নিউ দিল্লী টাইমস, টাইমস অব লস এঞ্জেলেস, টাইমস অব পর্তুগাল, টাইমস অব নর্থ কোরিয়া ও নিউ ইয়র্ক জার্নাল আমেরিকান সহ অন্যান্য নিউজ পোর্টালও রয়েছে। অন্যান্য বার্তা সংস্থার প্রতিবেদন পুনঃপ্রকাশের পাশাপাশি ভারত-সংশ্লিষ্ট উৎসব, অনুষ্ঠান এবং পাকিস্তান-বিরোধী সংবাদও পুনঃপ্রকাশ করে থাকে এগুলো।কাশ্মীর ইস্যুতে জনমত গঠনএদিকে, কোয়ার্টজ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ইইউ ডিজইনফোল্যাব তাদের অনুসন্ধানে প্রতারণামূলক প্রতিষ্ঠান, অপ্রচলিত গণমাধ্যম ও আইনিভাবে অস্তিত্বহীন সংগঠনের মধ্যে যোগসাজশ খুঁজে পেয়েছে। এরা সম্মিলিতভাবে ইইউ ও জাতিসংঘে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে থাকে। এসব প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য ছিল গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের স্বায়ত্ত্বশাসন রদ করার সিদ্ধান্তের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমর্থন অর্জন করা। গত ৩০শে অক্টোবর কাশ্মীর পরিদর্শনকারী ইইউ সাংসদদের পরিদর্শনের খবরকে ভিন্ন আঙ্গিকে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। অনেকে ওই সফরকে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তকে বৈধতা দেয়ার সামিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ইইউ ডিজইনফোল্যাব জানিয়েছে, বেশিরভাগ ভুয়া ওয়েবসাইটগুলোরই একটি করে টুইটার একাউন্ট আছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী আইনপ্রণেতাদের প্রভাবিত করতেই এগুলো চালু করা হয়েছে। এসবের পাশাপাশি পাকিস্তান-বিরোধী খবরে জোর দিয়ে তাদের প্রতি জনমত পাল্টে দেয়ার চেষ্টা করা হয় এই ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে।ইইউ ডিজইনফোল্যাব আরো জানায়, যেহেতু এই ভুয়া সংবাদমাধ্যমগুলো একাধিক গণমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে খবর প্রকাশ এবং এক সাইট অপর সাইটের নিউজ প্রকাশ করায় পাঠকদের জন্য এই প্রতারণা ধরা কঠিন। অনেকসময় কোনো বিষয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থনের ইঙ্গিতও দেয়া হয় প্রতিবেদনগুলোয়। তাদের অনুসন্ধানে দেখা যায়, কট্টর ডানপন্থি সংখ্যাগরিষ্ঠ ইইউ সাংসদদের একটি দল কাশ্মীর সফরের সময়কালে ইপিটুডেডটকম নামের একটি ওয়েবসাইট রাশিয়া টুডে ও ভয়েস অব আমেরিকা থেকে প্রচুর পরিমাণে প্রতিবেদন নিয়ে তা ফের প্রকাশ করছে। ইপিটুডে নিজেদের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের স্বঘোষিত ম্যাগাজিন হিসেবে দাবি করে। তাদের প্রকাশিত ওই কনটেন্টগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ আর্টিকেল ও পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ে মতামত সম্পর্কিত লেখার হার ছিল আশ্চর্যজনক রকমের বেশি। ইইউ ডিজইনফোল্যাব জানায়, তারা খতিয়ে দেখে যে, ইপিটুডে পরিচালত হয় ভারতীয় অংশীদারদের মাধ্যমে। নিউজ পোর্টালটির একাধিক এনজিও, থিংকট্যাংক ও একাধিক অপরিচিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছের শ্রীভাস্তভা গ্রুপ। ডিজইনফোল্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে যে, প্রশ্নবিদ্ধ নিউজ পোর্টাল নিউ দিল্লি টাইমস ও ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর নন-এলাইনড স্টাডিস (আইআইএনএস) সবগুলোর ঠিকানাই ওই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে মিলে যায়। কাশ্মীরে ইইউ সাংসদদের সফরের আয়োজন করেছিল আইআইএনএস। ধীরে ধীরে ইপিটুডেকে ঘিরে শুরু হওয়া তদন্তে বেরিয়ে আসে ইউরোপজুড়ে ভারতের বিশাল ভুয়া সংবাদমাধ্যমের ছড়িয়ে থাকার তথ্য।