ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের বামনকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জরাজীর্ণ ভবন, আসবাবপত্র, জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টির এখন বেহাল দশা। পাঠদানের জন্য একমাত্র ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে চলছে গাছতলায় পাঠদান। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি। ইতিপূর্বে একটি পাকা ভবন তৈরী হলেও সময়ের বিবর্তনে জরাজীর্ণ হয়ে তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠের পাশে গাছতলায় পাঠদান করাচ্ছেন। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টি হলে কিংবা প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষকরা ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই ক্লাস নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সরজমিনে দেখা যায়, পাঠদানের জন্য একমাত্র ভবনটির দেয়ালে ফাটল ধরেছে। ছাদের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। অনেক স্থানে বড় বড় ফাটল ধরে রড বেরিয়ে গেছে। সিমেন্ট-বালু খসে পড়ে বইখাতা নষ্ট হচ্ছে। ইতিপূর্বে সিমেন্টের ভাঙা অংশ পড়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক আহত হয়েছেন। এলাকাবাসীরা জানান, বিদ্যালয়ে আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি যেকোনো সময় ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টি, ধুলা-বালিসহ নানা প্রতিকূল পরিবেশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। ফলে পাঠে মন বসাতে পারছে না তারা। ঝড়-বৃষ্টি এলেই হৈ-হুল্লোড়, চেঁচামেচি করে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। বই-খাতা বাতাসে উড়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তামান্না জানায়, গাছতলায় বসে ক্লাস করার ফলে প্রায়ই বই-খাতা বৃষ্টিতে ভিজে যায়। ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা ভবন ভেঙে পড়ার ভয়ে স্কুলে যায় না। এদিকে বিদ্যালয়টিতে ৬ জন শিক্ষক থাকলেও একজনের পদ শূন্য রয়েছে। আসবাবপত্র, টয়লেট, লাইব্রেরিসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের চরম সংকট। পুরনো একটি টয়লেট থাকলেও তা ব্যবহারের অযোগ্য। ফলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। অপরদিকে বিদ্যালয়ে রয়েছে উপকরণ সামগ্রীর অভাব। ফলে মূল্যবান কাগজপত্র যত্রতত্র পড়ে থেকে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য একটি টিনশেড লাইব্রেরি থাকলেও একটু বৃষ্টি হলেই চালা দিয়ে পানি পড়ে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আকলিমা বেগম বলেন, একমাত্র ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে ঝরে পড়ছে। এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দ আহমেদ জামশেদ বলেন, বর্তমান সরকার অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ভাঙা উপজেলায় বেশকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ৪টি ভবন তৈরি হয়েছে। এ বছর ১৮টি বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ৬০টি বিদ্যালয়ে প্রাচীরসহ মেরামতের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। পিডিবি-৪ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে আধুনিক মানের অবকাঠামো তৈরি হবে। ফলে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও আকর্ষণীয় পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারবে।