বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদান ও শ্রমিক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে সোনারাগাঁয়ের কাঁচপুরে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ঘে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে পুলিশসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ অর্ধশতাধিক টিয়ার শেল ও কয়েক রাউন্ড রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। রোববার সকাল ১০টায় বেতন-ভাতা প্রদান, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ ও অন্যান্য কয়েকটি সুযোগ সুবিধার দাবিতে কাঁচপুরের সিনহা ওপেক্স গ্রুপের কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুরে সড়ক অবরোধ করলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় মহাসড়কে দেড় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গণপরিবহনের যাত্রীরা। বেলা সাড়ে ১১টায় পুলিশ শ্রমিকদের শান্ত করলে তারা মহাসড়ক থেকে সরে যায় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শ্রমিকরা জানান, গত কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন অজুহাতে বিনা নোটিশে শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করতে হলে তিন মাসের আগাম বেতন ও বিভিন্ন ভাতা প্রদানের নিয়ম থাকলেও সিনহা ওপেক্স গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তা মানছে না। এছাড়া মাতৃকালীন ছুটিতে গেলে শ্রমিকদের সেই ভাতাও প্রদান করা হয় না। প্রতি মাসের বেতন দেয়া হয় ১৫ তারিখের পর। এসব বিষয় নিয়ে শ্রমিকরা মালিক কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার দাবি জানালেও তারা কোনো কর্ণপাত করছে না। যে কারণে শ্রমিকরা দাবি আদায়ের জন্য বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে বিক্ষোভ মিছিল করে। এসময় শ্রমিকরা লাঠিসোটা হাতে নিয়ে কারখানার প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করলে নিরাপত্তাকর্মী ও পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে শ্রমিকরা গার্মেন্টের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুরু হয় শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটে কমপক্ষে ২০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।শ্রমিকদের দাবি, পুলিশ কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই তাদের উপর হামলা চালিয়ে লাঠিচার্জ করে, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ জোন-৪ এর ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত এ শাহীন জানান, সকালে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। তিনি জানান, এতে প্রায় ৫ জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। বর্তমানে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে এবং শ্রমিকরা শান্ত রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান তিনি।