বিয়ানীবাজার পৌরশহরের একাধিক হোটেল-রেস্টুরেন্ট এবং স্ন্যাকসবারে অবৈধ বেহায়াপনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সামপ্রতিক সময়ে এসব অপকর্মের মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। স্ন্যাকসবার কিংবা হোটেল-রেস্তরাঁয় এখন আর বসে সময় কাটানো যায় না। অশ্লীলতায় বিব্রত হয়ে দ্রুত বেরিয়ে আসতে হয় সাধারণ মানুষদের। তবে এ চিত্র চিহ্নিত দু’তিনটি রেস্টুরেন্ট এবং উত্তরবাজারের দু’তলা একটি স্ন্যাকসবারের।একাধিক সূত্র জানায়, পৌরশহর কিংবা পাড়া-মহল্লায় ছোট-ছোট অনেক চায়ের স্টলে ভিসিডির ছবি প্রদর্শনের আড়ালে ‘পর্নোছবি’ চালানোয় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।বিয়ানীবাজার পৌরশহরে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই শতাধিক হোটেল-রেস্তরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে উত্তরবাজার, দক্ষিণবাজার, নয়াগ্রাম রোড ও কলেজ রোডে বেশ কয়েকটি অভিজাত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সবক’টি রেস্টুরেন্ট আবার নিজস্ব ঐতিহ্য নিয়ে সু-প্রতিষ্ঠিত। তবে, ছোট ছোট চায়ের দোকানে অবাধে প্রদর্শিত হয় পর্নোছবি। এসব দোকানে গাঁজায় বুঁদ হয়ে অনেক অর্ধবয়স্ক ব্যক্তিও ভিড় করেন যৌন উত্তেজনাকর ছবি দেখতে। পথশিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ- সবাই লাজলজ্জা ভুলে একাকার হয়ে যায়। মসজিদে আজানের সময়ও চায়ের স্টলগুলোতে চলে উদ্যাম নৃত্য। এ নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা চরম বিরক্ত। পোস্ট অফিস রোড, মুফচ্ছিল মার্কেট, দাসগ্রাম, কদুগঞ্জ বাজার, থানা বাজার, বারইগ্রাম, বৈরাগীবাজার, শেওলা, চারখাই বাজার, কাকুরা বাজার, দাসউরা বাজার, নালবহর, কাজিরবাজার, অফিসবাজারসহ বিভিন্ন গ্রামীণ বাজারের চায়ের স্টলে চলে অশ্লীল ভিসিডি। ছোট চায়ের স্টলে ভিড় করে নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকজন। এসব হোটেলের ছোট-ছোট কেবিনে পর্দা টানিয়ে যেমন খুশি তেমন মেলামেশা করে তরুণ-তরুণীরা। এক্ষেত্রে কলেজ শিক্ষার্থীরা বেশ এগিয়ে। সকালে প্রাইভেট পড়ার নামে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে হাজির হয় তারা ওইসব জায়গায়। হোটেলের ছোট কেবিনে আলো-আঁধারি পরিবেশে চলে হাত ধরাধরি, তারপর অনেক কিছু...। এভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রাইভেট (!) পড়ে তারা বাড়ি ফিরে। মা-বাবার কাছে তাদের এই সময়ের হিসাব দিতে হয় না। কারণ তারা জানে, তাদের আদরের সন্তান প্রাইভেট পড়তে টিউটরের (!) কাছে গেছে। কয়েক বছর থেকে হোটেলটিতে এরকম বেহায়াপনা চললেও প্রশাসন এবং সাধারণ মানুষ নীরব। সবাই জানে এই হোটেলে বসার পরিবেশ নেই। কলেজ রোডে এরকম আরো দু-একটি হোটেল রয়েছে। যেখানে সচেতনরা আসতে চান না, বসতেও চান না। শুধু কপোত-কপোতীদের দেয়া কেবিন ভাড়া দিয়েই ব্যবসা চালায় এসব হোটেল মালিকরা। এগুলোতে আবার বিয়ের ঘটকদের আনাগোনা খুব বেশি। কনে দেখা থেকে শুরু করে বিয়ের পাকা কথাবার্তাও হয় বিতর্কিত রেস্তরাঁয়। প্রায় ৪/৫ বছর আগে একটি অভিজাত বিপণি বিতানে খোলা এরকম সমালোচিত ক্যাফে বন্ধ করে দেয়া হয়। সরজমিন অনুসন্ধানকালে এ প্রতিবেদকের কাছে ধরা পড়ে হোটেল-রেস্তরাঁর যতসব আপত্তিকর দৃশ্য। কৌশলে কেবিনের পর্দা সরানোর পর যেসব দৃশ্য দেখা গেছে তা বর্ণনা করা যাবে না। মাধ্যমিক পর্যায়ে লেখাপড়া করে এমন শিক্ষার্থীরাও হোটেলে ভিড় জমায়। সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে বিয়ানীবাজার হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল হোসেন বলেন, এ ধরনের কোনো বিষয় আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তা ছাড়া অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি পেলে নৈতিক স্খলনের এমন হার কমে যাবে। এদিকে, পৌরশহরের উত্তরবাজারে অবস্থিত একটি দু’তলা স্ন?্যাকসবারে সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সিরিয়াল নিয়ে ডেটিং করেন প্রেমিক যুগল। এখানে ঘণ্টাপ্রতি গুনতে হয় ৫-৬শ’ টাকা। প্রতিবেশী অনেক ব্যবসায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলেছেন। কিন্তু স্ন?্যাকসবার কর্তৃপক্ষ আরো বেপরোয়া। সমপ্রতি এখানে বিছানাও পাতানো হয়েছে। এসব বিষয়ে উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাবুল আহমদ বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারে শিক্ষার্থীরা বেহায়াপনার দিকে ধাবিত হচ্ছে। অভিভাবকদের এখন সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অবনী শংকর কর জানান, বিষয়টি নিয়ে হোটেল মালিকদের ডেকে এনে সতর্ক করা হবে। সংশোধন না হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।