কাজ শেষ হবার আগেই ভেঙে যাচ্ছে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার প্রায় আড়াই কোটি টাকার সংযোগ সড়ক। অসমাপ্ত রেখেই ঠিকাদার কাজ বন্ধ করেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। লালমনিরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় জানান, বিগত ২০১৭ সালের ভয়াবহ বন্যায় নষ্ট হওয়া সড়কগুলো সংস্কার করতে ফ্লাড ডিজাস্টার ড্যামেজ রুলার রোড ইনফ্লাকচার ফান্ড (এফডিডিআরআরআইপি) প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেয় সরকার। লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় ১৭টি প্রকল্পের বিপরীতে ৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বরাদ্দ আসে গত অর্থবছরে। যা বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। ১৭টির মধ্যে মাত্র ৬টির কাজ শেষ হলেও ১১টি চলমান রয়েছে। পুরো প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৬৫ শতাংশ হলেও অর্থিক অগ্রগতি দেখানো হয় ৫৯ শতাংশ। এ প্রকল্পের আওতায় আদিতমারী উপজেলার বুড়িরবাজার মহিষখোচা সংযোগ সড়কের ৫.০৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে বরাদ্দ দেয়া হয় ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪৪ হাজার ৩৭২ টাকা। যার মধ্যে বুড়িরবাজারে ১০০ মিটার ও মহিষখোচা বাজারে ৫০০ মিটার আরসি ঢালাই ধরা হয়। দরপত্রে কাজটি পান স্থানীয় ঠিকাদার আব্দুল হাকিম। কিন্তু তার কাছ থেকে কমিশনে ক্রয় করে কাজ করেন ঠিকাদার দাউদ আলী সরদার। কাজটি শুরু থেকে স্থানীয়রা নিম্নমানের কাজের অভিযোগ করে আসলেও কর্ণপাত করেন নি প্রকৌশলীরা। নিম্নমানের ইট, পাথর ও বিটুমিন ব্যবহার করে দায়সারা কাজ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সড়কের উভয় পাশে মাটি দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ফলে কাজ শেষ না হতেই ৫ কিলোমিটারের এ সড়কটির প্রায় ১২-১৫টি স্থানে ভেঙে গেছে। সড়ক দেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু স্থানে। জোড়াতালি দিয়ে সড়কটি সংস্কার করলেও করা হয়নি দুই বাজারে ৬শ’ মিটার আরসি ঢালাই। এতেই কাজ সমাপ্ত করে চলে যান ঠিকাদার। এদিকে প্রকৌশল দপ্তর ঠিকাদারের সঙ্গে আঁতাত করে শতকরা ৯৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে ইতিমধ্যে ২ কোটি ৬৫ লাখ ৬১ হাজার ৩৮০ টাকা পরিশোধ করেন। ফলে বাকি কাজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে অতিরিক্ত মেয়াদ ২০ শতাংশ আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে। অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে এবং ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েও করাতে পারছে না প্রকৌশল দপ্তর। ফলে এ পথের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে চলাচল করছে। আরসি ঢালাই না করায় দুই বাজারে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টিতে হাঁটু পানি জমে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে পণ্য। ওই এলাকার বকুল ও বাবুল মিয়া বলেন, পুরাতন ইট খোয়া উল্টিয়ে দিয়ে রোলার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। যানবাহনের ওজনে যতটুকু রোলার হয়েছে। এরই উপর একবারই বিটুমিন পাথর দিয়ে তবেই ছোট রোলার দেয়া হয়। নিম্নমানের ইট ও পুরাতন বিটুমিন মিশ্রিত খোয়া ব্যবহার করায় কাজ শেষ না হতেই বিভিন্ন স্থানে সড়কটি দেবে গেছে এবং ঢেউ খেলানো হয়েছে। চুক্তিপত্রের ঠিকাদার আব্দুল হাকিম বলেন, কাজটি দাউদ আলী সরকারের মাধ্যমে করছি। তবে দাউদ আলী সরদার বলেন, স্থানীয় লোকজন ভালো না। তাই কাজ বন্ধ রেখেছি। চুক্তির সময় যা হোক নভেম্বর মাস নাগাদ বাকি কাজ করে দেয়া হবে। আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, স্থানীয়রা মাটি সরবরাহ না দিলে ঠিকাদার মাটি পাবে কোথায়? ভেঙে যাওয়া অংশ মেরামত করতে এবং বাকি কাজ সমাপ্ত করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কাজটি স্টিমেট করতে ভুল হওয়ায় ঠিকাদারের কিছুটা লোকসান হচ্ছে। তাই কাজে গড়িমসি করলেও কাজ বুঝে নেবেন বলেও জানান তিনি। সদ্য যোগদান করা লালমনিরহাটের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফ আলী খান জানান, নতুন এসেছেন তাই বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।