দেশে এখন ছুটির বাঁশির সুর সবার প্রাণে। ঈদের ছুটি, শুক্র-শনিবারের ছুটি, বাংলা নববর্ষের ছুটি, এর সঙ্গে আগে-পরে দু-একদিন যোগ করে প্রায় দশ দিনের ছুটির আমেজ। শিক্ষার্থীরা আগেই চলে গেছেন। চাকরিজীবীরা এখন ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
ঈদ আর পহেলা বৈশাখে পরিবারের সঙ্গে কাটানোর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সবাই ঘরে ফিরছেন। অনেক বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির পরও মানুষ হাসিমুখে ঘরে ফেরে। আপনজনের সঙ্গে দেখা করার সুখ অনির্বচনীয়। সেই আপনজন যারা সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। যাদের ভালোবাসায় জীবন পূর্ণ হয়। মানুষ বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পায়। এই ঘরে ফেরা তাই শুধুই যাওয়া-আসা নয়, স্বজনদের প্রতি মানুষের এক অনন্য মানবিক সম্পর্কেরও বহির্প্রকাশ।
যদিও এই আনন্দ দীর্ঘ নয়। ছুটির দিনগুলো শেষ হলেই সখেদে মনে হবে ইস, আর কয়টা দিন যদি প্রিয়জনদের সঙ্গে এভাবে কাটানো যেত! এ কথা সবারই জানা যে চাওয়া-পাওয়া একসঙ্গে মেলানো সহজ নয়। তবু আমরা চেষ্টা করি। তবু অসম্ভবের মতোই যেন হয়ে আছে আমাদের অনেক গভীর প্রত্যাশা।
ঈদের ছুটিতে প্রিয়জনের সান্নিধ্য অত্যন্ত আনন্দের। ঈদ শুধু ধর্মীয় আচার নয়, উৎসবেরও দিন। শান্তি, সৌহার্দ্য আর আনন্দের বার্তা নিয়ে পালন করা হয় ঈদ-উৎসব।ঈদুল ফিতরে আনন্দের মাত্রাটা যেন একটু বেশি। কারণ দীর্ঘ এক মাসের ত্যাগ ও সংযম সাধনার পর ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি খুব আনন্দের সঙ্গে পালন করে থাকে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঈদুল ফিতর হলো বৃহত্তম বাৎসরিক উৎসব। এর ধর্মীয় বিধানটুকু কেবল মুসলিমরা পালন করে, কিন্তু উৎসবের বাকি আনন্দটুকু জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সব মানুষই সামিল হয়। দুঃখ-কষ্ট ভুলে অন্তত ঈদের দিনে যে যার সাধ্যমতো খুশিতে মেতে ওঠে। তবে এই দিনটি সবচেয়ে বেশি আনন্দের বার্তা বয়ে আনে শিশুদের জন্য। তারা ঈদের নতুন জামা-কাপড় পরে সকাল থেকে শুরু করে সারাটা দিন প্রজাপতির মতো ঘুরে বেড়ায়। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাড়ি যায়, এটা-ওটা খায়। আনন্দ-আর খুশিতে মেতে ওঠে।
আমরা যারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী ছিলাম, ছোটবেলায় আমরাও এই বিশেষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করতাম। ভালো জামা-কাপড় পরে অপেক্ষা করতাম কখন ঈদের নামাজ শেষ হয়। নামাজ শেষ হওয়া মাত্র আমরাও উৎসবে সামিল হয়ে যেতাম। সবাই খুশি মনে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করতাম। তারপর শুরু হতো বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেমাই খাওয়ার পালা।