কয়েক দিন আগে কিশোর বয়সী এক ছেলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ছেলে আর মেয়ের বিয়ের বয়স নিয়ে। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের জন্য নির্ধারিত ১৮ বছর আর ছেলের জন্য নির্ধারিত ২১ বছর বয়স প্রসঙ্গে সে আমাকে অবাক করে দুটি প্রশ্ন করে বসল। তার প্রথম প্রশ্নটি ছিল, ‘আপনারা তো সব সময় ছেলে আর মেয়ের সমান অধিকারের কথা বলেন। তাহলে তাদের বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেন?’ তার দ্বিতীয় প্রশ্নটি ছিল, ‘যদি একজন ছেলে ১৮ বছর বয়সেই ভোটাধিকার লাভ করে, তবে সে কেন ১৮ বছর বয়সে বিয়ের অধিকার লাভ করবে না?’ কিশোরের যুক্তি আর চিন্তার গভীরতায় অবাক না হয়ে পারলাম না। এই বিষয়গুলো নিয়ে যে এর আগে চিন্তা করিনি, তা-ও নয়। তবে কিশোরের প্রশ্ন আমাকে আরেকবার নতুনভাবে ভাবিয়েছে।
২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ২ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বাল্যবিবাহের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে, ‘বাল্যবিবাহ’ অর্থ এইরূপ বিবাহ, যার কোনো এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’। অর্থাৎ যখন কোনো বিয়ের এক পক্ষ বা উভয় পক্ষ অপ্রাপ্ত বয়স্ক হবে, তখন সেই বিয়েকে আইনত বাল্যবিবাহ বলা হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ কারা? একই আইনের ২ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারায় বলা হয়েছে, ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক’ অর্থ বিবাহের ক্ষেত্রে ২১ বছর পূর্ণ করেননি এমন কোনো পুরুষ এবং ১৮ বছর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারী। অর্থাৎ সরাসরি বললে বিয়ের জন্য ছেলের বয়স হতে হবে অন্তত ২১ বছর এবং মেয়ের ১৮ বছর। প্রশ্ন হলো বিয়ের যোগ্যতার ক্ষেত্রে ছেলে আর মেয়ের বয়সের এই পার্থক্যের ভিত্তি কী?
১৯২৯ সালে প্রণীত প্রথম বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়ের বিয়ের বয়স ১৪ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৯৬১ সালে এবং ১৯৮৬ সালের সংশোধনীতে মেয়ের বিয়ের বয়স যথাক্রমে ১৬ ও ১৮ বছরে উন্নীত করা হয়। আইনে বারবার নারীর বয়স নির্ধারণ নিয়ে নানা পরিবর্তন লক্ষ করা গেলেও পুরুষের বয়স নির্ধারণে তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায়নি। প্রতিটি সংশোধনীতে এমনকি ২০১৭ সালে নতুন যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনটি প্রণয়ন করা হয়, তার সব কটিতেই ছেলের বয়স মেয়ের বয়সের চেয়ে বেশি রেখে বিধান করা হয়েছে। ছেলের বয়স কেন মেয়ের বয়সের চেয়ে বেশি হতে হবে, সে-সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা কিন্তু কখনো কোথাও চোখে পড়ে না। ২১ নয়, বরং ১৮ বছর বয়সে একজন নারীর বিয়ে হলে তিনি দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিংবা সন্তান জন্মদানে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন, এই ধরনের কোনো ব্যাখ্যাও কোথাও চোখে পড়ে না।