ছবি সংগৃহীত

'প্রেমিক নাম্বার ওয়ান' চলচ্চিত্রের খুঁটিনাটি

রকিবুল আলম পরিচালিত 'প্রেমিক নাম্বার ওয়ান' একটি ব্যবসাসফল ছবি। অ্যাকশন দিয়ে শুরু হয়েছে ছবির কাহিনী। এতে অভিনয় করেছেন শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, মিশা সওদাগর, সুজাতা, কাজী হায়াৎ, আসিফ ইকবাল, ডন, সাঙ্কুপাঞ্জা, কাবিলা, নাসরিন প্রমুখ।

priyo.com
লেখক
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০১৩, ১৩:২৩ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:৫৮
প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০১৩, ১৩:২৩ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:৫৮


ছবি সংগৃহীত
এবারের ঈদ উৎসবে চারটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এগুলো হলো_ সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত 'পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী', মালেক আফসারীর 'ফুল এন্ড ফাইনাল', রকিবুল আলম রাকিব পরিচালিত 'প্রেমিক নাম্বার ওয়ান' ও শাহ মোঃ সংগ্রামের 'কী প্রেম দেখাইলা'। ছবিগুলো দেখার জন্য হলে দেখা গেছে উপচে পড়া দর্শকভিড়। সবমিলিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সফল এ ছবিগুলো। 'প্রেমিক নাম্বার ওয়ান' ছবিটির পর্যালোচনাঃ পরিচালনা :রকিবুল আলম রকিব।। কাহিনী :আবদুল্লাহ জহির বাবু। সঙ্গীত :শওকত আলী ইমন। চিত্রগ্রহণ :আসাদুজ্জামান মজনু। সম্পাদনা :তৌহিদ হোসেন চৌধুরী। প্রযোজনা :আনোয়ার হোসেন মিন্টু। পরিবেশনা :সাদিয়া সোহান কথাচিত্র। অভিনয়ে :শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, নিপুণ, মিশা সওদাগর, সুজাতা, কাজী হায়াৎ, আসিফ ইকবাল, ডন, সাঙ্কুপাঞ্জা, কাবিলা, নাসরিন প্রমুখ। রকিবুল আলম রকিবের নাম অনেক শুনেছি। এখন যারা ছবি বানাচ্ছে তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। এই ছবির গল্পও বাবুর। 'ফুল এন্ড ফাইনাল'-এ যেমন করে অ্যাকশন দিয়ে শুরু হয়েছে এখানেও তাই। ওটাতে ছিল ড্রাগসের ব্যবসা, এখানে চাঁদাবাজি আর জবর-দখল। খুন-খারাবি, নৃশংসতা একই। শিমুলতলী এলাকাটা কোথায় আমি জানিনা, কারণ বাংলাদেশে কোথাও পাঁচ-ছয়টা দামি গাড়ি করে ফাইটারদের বিশেষ রঙের কাপড় পরিয়ে নিয়ে এসে দোকানিদের মেরে মাটিতে ফেলে তাদের সবার ওপর পা দিয়ে মাড়িয়ে কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসীও চাঁদাবাজি করে বলে শুনিনি। চাঁদাবাজরা এত বোকা নয়। তাতেও ক্ষান্ত হননি কাহিনীকার। থানায় যে অভিযোগ লেখাতে এসেছিল, তাকে ও ওসিকে থানার ভেতর ঢুকে সব পুলিশের সামনে মেরে ফেলা হলো। দোকানের মালিক সাজ্জাদ সাহেব যখন দোকানিদের দলিল লিখে দান করছিল তখন মিশা এসে মালিককে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে মেরে ফেলে, তার ছেলে খসরু প্রতিবাদ করায় তাকেও মেরে ফেলে। এত লোক মেরে ফেলে মালিকের বউ ববিতা ও তার মেয়েকে কেন বাঁচিয়ে রাখল তা বোঝা গেল না। ববিতা থানায় গিয়ে নালিশ করলেন, ব্যস তারপরই তার কর্মকাণ্ড শেষ। এত ভয়ঙ্কর শক্তিশালী মিশাকে পরে দেখা যায় এই দলিলগুলো লোহার ঘর বানিয়ে স্টিলের আলমারির মধ্যে চোরের মতো লুকিয়ে রাখতে! অথচ প্রথম দিকের বীভৎস অ্যাকশন দৃশ্যগুলো ফেলে দিলে পরে যেখানে গল্পটা শুরু হয়েছে কাজী হায়াৎ, শাহীন শাহনুর, সুজাতা, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসকে নিয়ে তা বেশ উপভোগ্য ছিল। নতুনত্ব ছিল, দর্শকও খুব মজা পাচ্ছিলেন। শিমুলতলী গিয়ে দোকানে ভিলেনের মার, ছবি লাগানো, নিপুণের সঙ্গে পরিচয়ের পর্বটাও দর্শক বেশ উপভোগ করছিলেন; কিন্তু আবার সেই সব ছেড়ে অপ্রয়োজনীয় মারামারির দিকে ঝুঁকে ছবিটাকেও ঝুঁকিতে ফেলা হলো। অভিনয়ের ব্যাপারে কথা বলার কিছু নেই। শাকিব খান যে কতটুকু জনপ্রিয় তা প্রতিটি দৃশ্যে তার প্রবেশের সময় দর্শকের করতালিতে বোঝা যায়। অপু মোটামুটি ভালো করেছেন। তবে নিজের পোশাকের দিকে তার একটু নজর দেওয়া উচিত। নাচতে নেমে ঘোমটা দিলে দুদিকই হারাতে হয়, নাচও জমে না, ঘোমটাও থাকে না। এক্ষেত্রে ছবিতে অপুর চেয়ে বরং নিপুণকে বেশি আকর্ষণীয় লেগেছে। কাজী হায়াৎ সব ছবিতেই একই রকম, এতে তার দোষ দেওয়ার কিছু নেই। একবার চরিত্রে সেট হয়ে গেলে তাকে আর ভিন্ন চরিত্রে পরিচালকরা নিতে চায় না, তাই অভিনয়ের কোনো বৈচিত্র্য আসে না। যেমন মিশা সওদাগর_'চেতনা' ছবির নায়ক ছিলেন। পরে খলনায়ক হয়ে এখনও একচ্ছত্র রাজত্ব করছেন। জোর করে চাঁদাবাজি করা, মানুষ মারা, দখল করা_ এ ছাড়া যেন ভিলেনের কোনো কাজ নেই। মিশার জন্য দুঃখ হয়, প্রকৃত একজন শিল্পীর যোগ্য আসন তাকে কেউ দিতে পারলেন না। আর আছেন ববিতা। আজকের সাদা চুন মাখানো মেকআপ, সেই সঙ্গে প্রাণহীন অভিব্যক্তি আর চিৎকার করা ববিতাকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি সত্যজিৎ রায়ের 'অশনি সংকেত'-এর নায়িকা। অন্যদিকে বাবুকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই। ছবির গল্প হাজারবার লিখলেও লগি্নকারকদের পছন্দ হবে না, ল্যাপটপে মাদ্রাজি বা তামিল ছবির ডিভিডি দেখিয়ে পছন্দ করাতে হবে। ব্যবসাসফল হয়েছে এমন ছবি দেখে-শুনে ওনারা গল্প তৈরি করতে বলেন। কিন্তু তারা একবারও ভাবেন না চেন্নাইয়ের পরিবেশ, সংস্কৃতির সঙ্গে আমাদের দেশের মিল আছে কি-না। সেই দর্শক কি আমাদের দর্শক? পরিচালক রকিবুল আলম রকিব এই ছবিতে অভিনয়ও করেছেন। হতাশ হলাম। খুন আর মারামারি করা ছাড়া কিছুই করেননি তিনি। আর একজনের কথা না বললেই নয়। খসরু সাহেব প্রযোজক সমিতির জাঁদরেল নেতা। তাকেও দেখলাম অভিনয় করতে, তিনিও 'আমার বাবাকে মেরো না' বলে গুলি খেয়ে মরে গেলেন! ছবিতে চরিত্র কেন সৃষ্টি হয়, কী তাদের কাজ, লোকে কেন মনে রাখবে, এসবের কোনো দরকার নেই। খসরু ও রকিব সাহেবের জন্য দুঃখ হয়, তারা কেউ বুক ফুলিয়ে আত্মীয়স্বজন, বাবা-মা-ভাইবোন, বউ-ছেলেমেয়েদের বলতে পারবে না যে ছবিটা দেখ_ আমি কী সুন্দর অভিনয় করেছি! ছবিতে আজকাল মিষ্টি আর শ্রুতিমধুর সঙ্গীত ব্যবহার হয় না বললেই চলে। চিত্রগ্রহণ-এডিটিং-মেকআপ সেট সবই তথৈবচ। অবশ্য ছবিতে নতুন একটা ট্রেন্ড এসেছে, দেশের বাইরে গিয়ে চিত্রায়ণ। বাংলাদেশের পটভূমির গল্পেরও সুটিং হচ্ছে মালয়েশিয়ায়! বাংলাদেশ আর মালয়েশিয়ার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট ধরা পড়লেও নির্মাতাদের কোনো বিকার নেই। ঘরের ভেতর বাংলাদেশ, বের হলেই মালয়েশিয়া, মনে হয় ঘরের দরজার বাইরে মালয়েশিয়ার অবস্থান। দর্শক কোথায় যাবে?

পাঠকের মন্তব্য(০)

মন্তব্য করতে করুন


আরো পড়ুন

loading ...