হালদা থেকে এবার ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৭ মে ২০১৯, ০০:০০

এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে এবার ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ হয়েছে। যার মূল্য প্রায় কোটি টাকারও বেশি বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম। তিনি জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় বজ্রবৃষ্টির পর শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হালদা নদীতে ডিম ছাড়তে শুরু করে কার্প জাতীয় মা মাছ। এরপর থেকে ডিম সংগ্রহ শুরু হয়। রবিবার সকাল পর্যন্ত ডিম সংগ্রহকারীরা ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করে বলে জানান তিনি। বলেন, প্রায় ৩৫০ নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহকারী হালদা নদী থেকে এবার ডিম সংগ্রহ করেছেন। তারা প্রত্যেকে ২২-২৩ বালতি করে ডিম সংগ্রহ করেছেন। কেউ কেউ এর চেয়ে বেশিও করেছেন। রাত ২টার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কেজির মতো ডিম সংগ্রহ হয়। রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ চলে। এই সময়ের মধ্যে আরো এক হাজার কেজির মতো ডিম সংগ্রহ হয়। মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল আলম, বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণের ফলে হালদা নদীর সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন খাল ও ছড়ায় পাহাড়ি ঢলের সৃষ্টি হয়। হালদা নদীতে ঢলের স্রোত বেড়ে যায়। এছাড়া অষ্টমী তিথির জো চলছে। এসময় ডিম ছাড়ে মা মাছ। ডিম আহরণকারীরা জানান, বাংলা বছরের চৈত্র ও বৈশাখ মাসে কাল বৈশাখী ও বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিপাত হলে হালদার সাথে সংযুক্ত খাল ও ছড়ার ঢলের পানি হালদা নদীতে গিয়ে পড়ে। একইসাথে পাহাড়ি এলাকার বর্ষণের পানি হালদা নদীতে পড়ে প্রবল ঢলের সৃষ্টি হয়। এতে কর্ণফুলী ,সাঙ্গু, মাতামুহুরী, চেংখালী, সোনাইখাল, কুমারখালী, বোয়ালিয়া, সত্তাখালসহ প্রভৃতি এলাকা থেকে মা মাছ হালদায় আসে ডিম ছাড়তে। তিনি আরো জানান, গত বছর ১৯শে এপ্রিল হালদায় মা মাছ ডিম দিয়েছিল। আদিকাল থেকে এই নদী থেকে কাতল, রুই, মৃগেল ও কালিবাউশ ডিম দেয়ার নজির থাকলেও গত কয়েক বছর থেকে রুই ও কালিবাউশ মাছের ডিম পাওয়া যাচ্ছে সামান্যই। বিগত এক দশকের মধ্যে ডিম পাওয়ার সর্ব্বোচ রেকর্ড গত বছরের হলেও ওই সময়ও ডিম থেকে উৎপাদিত রুই ও কালিবাউশ এর পোনা পাওয়া যায় কমই। আর এ বছর দেরীতে বজ্রবৃষ্টি হওয়ায় মা মাছেরাও ডিম ছাড়ে দেরীতে। ডিম আহরণকারী মৃদুল বড়ুয়া জানান, বজ্রবৃষ্টির পর তার লোকজন নিয়ে ডিম আহরণের জন্য নদীর আজিমারঘাট এলাকায় অবস্থান করেন। রাতে ভাটার সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে। সেখান থেকে ২৪ বালতি ডিম সংগ্রহ করা হয়। যার ওজন ৩৬০ কেজি। এছাড়া হালদা নদীর অংকুরীঘোনা, পশ্চিম গহিরা, বিনাজুরী, কাগতিয়া, কাসেম নগর, আজিমের ঘাট, গোলজারপাড়া, মগদাই, নাপিতের ঘাট, পশ্চিম আবুরখীল, উরকিরচর, খলিফারঘোনা, সার্কদা, মোকামীপাড়া, কচুখাইন ও হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নয়াহাট, মাদার্সা, দক্ষিণ মাদার্সা, আমতুয়া, রামদাশ হাট, মাছুয়াঘোনা এলাকায় হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে। পশ্চিম গহিরা অংকুরীঘোনা এলাকার ডিম সংগ্রহকারী বিধান বড়ুয়া জানান, তার তিনটি নৌকা নিয়ে নাপিতের ঘাট এলাকায় নদী থেকে ২৬ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম সংগ্রহকারী রূপম বড়ুয়া বলেন, ৪টি নৌকা নিয়ে নদী থেকে ২০ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। নেপাল বড়ুয়া ৪ বালতি ডিম সংগ্রহের কথা জানান।ডিম সংগ্রহের পর আহরণকারীরা রবিবার সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন হ্যাচারিগুলোতে। তবে এবার  ডিম সংগ্রহের পরও আরো কয়েকটি কুয়ো খালি পড়ে আছে। বেজায় খুশি ডিম আহরণকারীরা, বিশেষ করে কুয়ো নিয়ে গত বছর রেকর্ড পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হলেও কুয়োর সংস্কারের অভাবে অধিকাংশ ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। যার জন্য দুষছিলেন হ্যাচারি কমিটির লোকদের।  হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হালদা থেকে সংগৃহীত ডিম থেকে রেনু ফোটানোর জন্য তিনটি হ্যাচারি, দশটি প্লাষ্টিকের কুয়া এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক মাটির কুয়া তৈরি করে রাখা হয়। হ্যাচারিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগসহ রেণু ফোটানোর যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বছর হালদা নদীতে ৪০৫টি নৌকায় ২২ হাজার ৬৮০ কেজি ডিম সংগ্রহ করেছিল। যা থেকে ৩৭৮ কেজি পোনা উৎপাদন করা হয়। ডিম সংগ্রহের এই রেকর্ডটি ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্ব্বোচ। এছাড়া মৎস্য বিভাগের তথ্যানুসারে ২০১৭ সালে ডিম সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭২০ কেজি, ২০১৫ সালে ২ হাজার ৮০০ কেজি, ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি, ২০১৩ সালে ৪ হাজার ২০০ কেজি, ২০১২ সালে ২১ হাজার ২৪০ কেজি, ২০১১ সালে ১২ হাজার ৬০০ কেজি এবং ২০১০ সালে ৯ হাজার কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয় হালদা থেকে। এভাবে ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমেই হ্রাস পাওয়ায় এবার হালদা নদীর মা- মাছ রক্ষায় বিশেষ অভিযান চালায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন।   তিনি বলেন, হালদা নদীর মা-মাছ রক্ষায় এবার ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, অবৈধ জাল ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে এবার গত বছরের সমপরিমাণ ডিম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে আগামী বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us