প্রতিবাদ আর কান্নায় পালিত হলো রানা প্লাজার ৬ষ্ঠ বার্ষিকী

মানবজমিন প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে স্মরণকালের ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বার্ষিকী গতকাল পালিত হয়েছে। নিহত ও আহতদের স্বজনহারাদের কান্না প্রতিবাদী শ্রমিকদের খণ্ড খণ্ড মিছিল আর স্লোগানে পালিত হয় রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বর্ষ। গতকাল সকাল থেকেই ফুল হাতে বিভিন্ন ব্যানারে শ্রমিকরা আসেন রানা প্লাজার পরিত্যক্ত জমি ও স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদির সামনে। কেউ এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে, কেউ স্বজনদের মৃত্যু ভূমি দেখার জন্য আবার কেউ এসেছিলেন আর্থিক সহায়তা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে। রানা প্লাজার আহত শ্রমিক জাহানারা, তানজিলা আক্তার, মরিয়ম বেগম, শিলা, বিউটি, মামুন, সাজু ও রাশিদা বেগমরা সেদিনের কথা বলতেই চমকে ওঠেন। ভবন ধসের ছয় বছর পার হলেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তারা। কারো মাথা ব্যথা, কারো হাত-পা ও পিঠের ব্যথা নিয়ে এখনো লড়ে যাচ্ছেন অনিশ্চিত জীবনের সঙ্গে। পূর্ণ চিকিৎসা সেবার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এদিকে নিহত ছেলের স্মৃতি বুকে নিয়ে রানা প্লাজার সামনে ছবি নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ধসে পড়া রানা প্লাজার তৃতীয় তলার নিউ ওয়েব বটম লিমিটেড কারখানার সেলিমের মাসহ অনেক নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকের স্বজনেরা। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। রানা প্লাজায় নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া দলীয় এবং সংগঠনের ব্যানার ছাড়াও অনেক আহত শ্রমিক এবং স্বজনহারা লোকজন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া ভবন ধসে নিহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের স্মরণে ঢাকা জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শেষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে ভবন ধসের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্ট, সাভার-আশুলিয়া-ধামরাই শিল্পাঞ্চল কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট সৌমিত্র কুমার দাশ, আহসান হাবিব বুলবুল, আনিসুর রহমান, কাওসার আহমেদ প্রমুখ। সভায় বক্তাগণ বলেন, রানা প্লাজা ধসের ৬ বছর পূর্ণ হলেও ভবন ধসে নিহত ১১৩৬ জন শ্রমিক পরিবারের স্বজনরা হত্যার বিচার পায়নি। হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ভবন মালিকসহ গার্মেন্ট মালিকদের কোনো বিচারই হয়নি। ফলে মালিকরা দিনে দিনে আরো বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে। বক্তাগণ আরো বলেন, শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের ন্যায্য দাবিতে কথা বলতে গেলে নিরীহ শ্রমিকদের ও শ্রমিক নেতাদের নামে মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা করা হয়। অবিলম্বে শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী ৪৮ লাখ টাকা করাসহ দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিধান করে আইন প্রণয়নের দাবি জানান তারা। বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ৬ বছর অতিবাহিত হলেও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। এ ছাড়া আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, ২৪শে এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা, রানা প্লাজার সামনে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ এবং রানা প্লাজার জমি অধিগ্রহণ করে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারকে পুনর্বাসন করার দাবি জানান। গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির প্রধান সমন্বয়ক জুনায়েদ সাকি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো ভবন ধসের ঘটনায় জড়িতদের বিচার হয়নি। তাই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার বিচারের পাশাপাশি এ ভবনটি তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। তিনি আরো বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির পক্ষ থেকে আমরা প্রতিমাসের ২৪ তারিখে শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সভা সমাবেশ করি। কারণ শ্রমিকদের জীবন মান উন্নয়ন ছাড়া শিল্প খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শিল্প কারখানার বিকাশে উপযুক্ত কর্ম পরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি ক্ষতিপূরণের আইন বদল করে শ্রমিকদের এক জীবনের সমপরিমাণ আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত নয়তলা বিশিষ্ট রানা প্লাজা ধসে পড়ে। ওই সময় রানা প্লাজায় থাকা ৫টি তৈরি পোশাক কারখানার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কর্মচারী কাজ করতেন। পোশাক শিল্পের ইতিহাসে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনায় মারা যায় ১১৩৬ জন শ্রমিক। জীবিত উদ্ধার করা হয় ২৪৩৮ জন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয় ১১৬৯ জন।
সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us