প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে এমন একটি বিবৃতি খুব জরুরি ছিল। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তা করেছেন। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা এবং তার অঙ্গনের নিরাপত্তা ও মান নিয়ে বিভিন্ন মহলে কিছু সংশয় যে দেখা দিয়েছে, তা অস্বীকার করা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টে নজিরবিহীন ঘটনা ও জেলা আদালতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি ২৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে যে নজিরবিহীন অনভিপ্রেত ঘটনাবলি সংঘটিত হয়েছে এবং দেশের জেলা আদালতসমূহে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে— সেসব বিষয় সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশের আদালতসমূহ যাতে বিচারপ্রার্থীদের নির্বিঘ্নে বিচারসেবা দিতে পারে, সে লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সামগ্রিক বিষয়াবলি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মে আশ্বস্ত করছে যে, সব প্রতিকূলতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও দেশের আদালতসমূহে বিচারসেবা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। প্রধান বিচারপতি দেশের আদালতগুলোতে এরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি রোধ করতে ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং দেশের সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালকে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রেখে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিচারপ্রার্থী জনগণকে বিচারসেবা দেওয়ার ধারা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধান বিচারপতির বিবৃতিতে এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দেওয়া হয়েছে। উদ্বেগ প্রকাশের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণসহ দেশের জেলা আদালতগুলোতে ঘটে যাওয়া নজিরবিহীন ঘটনা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। গত ২৭ নভেম্বর, হাইকোর্ট বেঞ্চে ঘটে যাওয়া ডিম নিক্ষেপের ঘটনা এবং বিচারকদের বেঞ্চ থেকে সরে যেতে বাধ্য করা, চট্টগ্রামে আদালত এলাকায় একজন আইনজীবীকে প্রকাশ্যে হত্যা খারাপ পরিস্থিতির দুটি উদাহরণ। এসব ঘটনা শুধু আইনজীবী বা বিচারকদের জন্যই নয়, বরং আদালতের সর্বস্তরের কর্মচারী এবং সাধারণ জনগণের জন্যও উদ্বেগজনক।
প্রধান বিচারপতির দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী, সুপ্রিম কোর্ট ও দেশের প্রতিটি আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা বিচারপ্রার্থীদের নির্বিঘ্নে বিচার সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, এবং এর সুষ্ঠু কার্যক্রম এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনের শাসন বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তার নির্দেশনায় বিচারকদের এজলাস, বাসভবন এবং আদালত প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা রক্ষা করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা আদালতের ভাবমূর্তি এবং জনগণের বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচারের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে, বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা নিশ্চিত করতে হবে। একদিকে, আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা; অপরদিকে, বিচারপ্রার্থীদের এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি ন্যায্য ও অবিচল সেবা প্রদান একে অপরকে পরিপূরক করে। সুতরাং, প্রধান বিচারপতির নির্দেশনা শুধু একটি জরুরি পদক্ষেপই নয়, বরং বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে আরও দৃঢ়, সুশৃঙ্খল এবং শক্তিশালী করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
গত কয়েক দিনে দেশে একের পর এক এমন সব সংঘাতময় ঘটনা ঘটে চলেছে, যা জনমনে আশঙ্কা এবং হতাশা তৈরি করেছে। পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হওয়া থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে সহকারী সরকারি কৌঁসুলি সাইফুল ইসলামের নৃশংস হত্যাকাণ্ড— এসব ঘটনা কেবল বিচ্ছিন্ন নয় বরং একটি বৃহত্তর অস্থিরতার অংশ বলে মনে হওয়াই স্বাভাবিক ।
সরকারের একাংশ মনে করে, এগুলো পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ফল। অথচ এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের এক ধরনের শৈথিল্য ও গোয়েন্দা তৎপরতার ব্যর্থতার অভিযোগ সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষীদের পক্ষ থেকেও তোলা হচ্ছে। প্রশাসনের দুর্বল পদক্ষেপ, আগাম সতর্কতার অভাব এবং সঠিক সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে পরিস্থিতি নিয়ে মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিচ্ছে।