খেলাপি ঋণ আদায়ে এখন যা করতে হবে

যুগান্তর এম এম আকাশ প্রকাশিত: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:১৪

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসাবে যোগদানের পর ব্যাংক খাতের সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, এ খাতে যে পর্বতপ্রমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে, তা আদায়ের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের এ অঙ্গীকার প্রশংসাযোগ্য। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক খাত যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। নতুন গভর্নর এ খাতে বিদ্যমান সমস্যার স্বরূপ অনুসন্ধান ও তা প্রতিকারের পন্থা খুঁজে বের করার জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের কমিশন গঠনের কথা বলেছেন।


ব্যাংক খাত নানা ধরনের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে জরুরি সমস্যা কী, তা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এ মুহূর্তে একটি জটিল বা জরুরি সমস্যা হচ্ছে, বেশকিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। এসব ব্যাংককে যদি তরল অর্থ না দেওয়া যায়, তাহলে তারা আমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। এমনকি দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমানতকারীরা একযোগে এসব ব্যাংক থেকে আমানত উত্তোলন শুরু করবে। সেই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


দেশে কোনো ব্যাংক দেউলিয়া না হোক-আমরা যদি এটা চাই তাহলে প্রথমেই সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর জন্য তরল অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কীভাবে তা করলে ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করাও হবে, আবার তাদের ফুটোপাত্রে পানি ঢালার মতো বিষয়ও হবে না?



কাজেই ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হলে কমিশনের প্রথম কাজ হবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে কয়েকটি টাইপে আলাদা করে চিহ্নিত করা। সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে হবে। দেখতে হবে সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে কোনগুলো উদ্ধারযোগ্য এবং কোনগুলো উদ্ধারযোগ্য নয়। যেগুলো উদ্ধারযোগ্য, তাদের তরল অর্থের জোগান দেওয়াসহ নানা ধরনের পলিসি সাপোর্ট দিতে হবে। যেগুলো উদ্ধারযোগ্য নয়, তাদের আর কোনো টাকা দেওয়া উচিত হবে না। দেউলিয়াত্ব শৃঙ্খলার সঙ্গে সর্বনিম্ন আতঙ্ক বজায় রেখে তা করার জন্য যা প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে।


দেউলিয়াত্ব থেকে উত্তরণের জন্য সমস্যাগ্রস্ত কিন্তু উদ্ধারযোগ্য ব্যাংকগুলোকে টাকা দিতে হবে। এখন দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, টাকাটা কীভাবে বা কোত্থেকে দেওয়া হবে? তবে প্রথম সংকট থেকে উত্তরণযোগ্য ব্যাংকগুলোকে আলাদা করে নিতে হবে। তারপর তাদের কী পরিমাণ টাকা প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করতে হবে। সমস্যাগ্রস্ত কিন্তু উত্তরণযোগ্য ব্যাংকগুলোকে ‘ভায়াবল’ বা টিকে থাকতে সক্ষম করতে কী পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণের পর কিভাবে এ অর্থের জোগান দেওয়া হবে, তা দ্বিতীয় পর্যায়ে ঠিক করতে হবে।


ব্যাংক খাতে বর্তমানে যে তারল্য সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে, তার মূল কারণ হচ্ছে অনাদায়ি খেলাপি ঋণ। কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে বিপুল পরিমাণ ব্যাংক ঋণ পড়ে আছে খেলাপি অবস্থায়। কোন ঋণগ্রহীতারা টাকা ফেরত না দেওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে, প্রথমেই তাদের নাম-ঠিকানা নিরূপণ করতে হবে। এরপর চিহ্নিত ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব বৃহৎ ঋণখেলাপির কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায় করে যদি সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে দেওয়া যায়, সেটা হবে সর্বোত্তম পন্থা। কারণ এখানে এক ঢিলে দুই পাখি মরবে। যারা ব্যাংকটির দেউলিয়াত্বের জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি দেওয়া হলো। আবার শাস্তিটা এমনভাবে দেওয়া হলো যে ব্যাংকটি আর দেউলিয়া হলো না। অর্থাৎ সাপও মরল আবার লাঠিও ভাঙল না। কারা কোন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি, তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে, প্রকাশ করতে হবে, বাজারে সিগন্যাল দিতে হবে যে, ‘খেলাপিদের ঘুম এখন থেকে হারাম’। হয়তো মনে হতে পারে, এক ব্যাংকের ঋণখেলাপির কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা অন্য ব্যাংককে দেওয়া যাবে না। তবে এটা ব্যক্তিগত মালিকানা ও বাজার অর্থনীতির নিয়মে ঠিক হলেও প্রয়োজন ও জনস্বার্থে সর্বদা ঠিক নাও হতে পারে। সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্ধারকৃত টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাধারণ তহবিলে প্রথমে জমা করতে হতে পারে, যদি ব্যাংকগুলো কোনো সম্মিলিত যৌথ অভিযানের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধারে নামে, তাহলে তা সম্ভব। তখন কমন ফান্ড থেকে যার প্রয়োজন যত জরুরি, তাকে তত আগে দেওয়া যেতে পারে। বন্ধুপ্রতিম ব্যাংক রাজি হলে অন্য ব্যাংকের তারল্য সংকট মেটানোর জন্য টাকা দেওয়া যেতে পারে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us