আন্দোলন ঠেকানোর জন্যই কি ছাত্ররাজনীতি

আজকের পত্রিকা মাসুদ উর রহমান প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০

শিক্ষকতা করছি প্রায় ২৫ বছর। এই দীর্ঘ সময়ে নানান ধরনের, নানান চরিত্রের, অল্প, মাঝারি, তুখোড় মেধাবী বা অতি-মেধাবী শিক্ষার্থীর সংস্পর্শে এসেছি। শুরুর দিকের অনেকেই পদ-পদবিতে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। হিংসা তো নয়ই বরং তাঁরা আমার অহংকারের অনুষঙ্গ। কোথায় যেন পড়েছিলাম—শিক্ষক হচ্ছেন একমাত্র পেশাজীবী, যে অন্যের সন্তানের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হন, গর্ব করেন।


আমার শিক্ষকতা-জীবনের গল্পটি খুবই নিদারুণ। কেন নিদারুণ সেই গল্প আজকের প্রসঙ্গ না। আজকের প্রসঙ্গ শিক্ষাঙ্গনের রাজনীতি নিয়ে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেই রাজনীতির রং নীল, সাদা, গোলাপি হলেও ফল কুচকুচে কালো! ব্যতিক্রম বাদ দিলে বড় চেয়ারগুলো নীল, সাদা, গোলাপি রং নিয়ে সেই বর্ণিল শিষ্যদের করুণায় ভর করে যাঁরা বসার সুযোগ পান, তাঁরা সরকারি দলের তোষামোদি-চাটুকারি করতে করতে এমন অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেন যে দিনকে ‘দিন’ বললে পাছে আবার জীবনে রাতের আঁধার নেমে আসে, সেই ভয়ে থাকেন। একসময় রূপহীন, গুণহীন কর্মে আর কদর্য আচরণে তার কুৎসিত রূপ ফুটে ওঠে। সেই বড় পদধারীরা যখন বিদায় নেন, তখন তাঁর কুকর্মের ফিরিস্তি বের হতে থাকে একে একে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ ছেড়ে যুবলীগের সভাপতি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করা শিক্ষাবিদকেও আমাদের দেখতে হয়েছে।


স্কুল-কলেজগুলোর অবস্থা তো আরও খারাপ। যেই বর্ণিল শিষ্যদের কথা একটু আগে বললাম, তাঁদের গালভরা বুলিকে আমরা বলি ছাত্রনেতা। তাঁদের কর্মকে বলি ছাত্ররাজনীতি। কোন উদ্দেশ্যে ছাত্ররাজনীতি বেছে নিলেন, এমন প্রশ্নে একবাক্যে উত্তর—সাধারণ ছাত্রদের দাবি-দাওয়া আদায়, তাদের অধিকার রক্ষার্থে। নিকট অতীতে তাঁদের অধিকার রক্ষার কাজটি বেশি চোখে পড়েছে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো দাবি-দাওয়া নিয়ে সোচ্চার হয়ে মাঠে নেমেছিল।



তো শুরুতে যে কথা বলেছিলাম—২৫ বছরের শিক্ষকজীবনে আমার শুরুর দিকের অনেক ছাত্র কর্মজীবনে উচ্চ পদধারী হওয়ার মতো রাজনৈতিক নেতৃত্বে অনেকে ভালো জায়গায় পৌঁছেছেন। তাঁদের কেউ কেউ যেমন বড় ছাত্রনেতা হয়েছেন, কেউ কেউ আবার সেই ধাপ অতিক্রম করে অঙ্গ ও পেশাজীবী সংগঠনের হয়ে জাতীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কয়েক মাস আগে হাইকোর্টের রায়ে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরে আসার পর বুয়েট তো বটেই, বাকি সব মেডিকেল কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়েও যখন ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে ছিল, অন্য অনেকের মতো আমিও মতামত ব্যক্ত করা শুরু করলাম। তখন সেই তাঁদের কাউকে কাউকে মনে হচ্ছিল বেশ বিরক্ত।


কারও কারও কমেন্ট-স্ট্যাটাসে সেই বিরক্তিবোধ স্পষ্ট টের পেতে লাগলাম। রাজনীতিতে হাতপাকানো আমার খুব প্রিয় এক ছাত্র অনেকটা ক্ষোভে তাঁর ওয়ালে লিখলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কাছে সুবিধা নিতে আরাম, কিন্তু রাজনীতি করা হারাম!’ এর উত্তরে আমি বলি, ‘এদেশের যেকোনো রাজনীতিককে যদি প্রশ্ন করা হয়, “রাজনীতিতে কেন এলেন”, অবশ্যম্ভাবী উত্তর—জনগণের সেবা করতে।’


এখন যিনি সেবার ব্রত নিয়ে রাজনীতিতে আসীন হয়েছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর কাছে সেবা নিতে যাওয়াটাই কি কাঙ্ক্ষিত নয়? নাকি কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেলেও চুপ করেই থাকতে হবে? সেবার আড়ালে আর যা হয় তা হজম করতে হবে?


এটি ঠিক যে ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আছে আমাদের। ফুরিয়ে যায়নি হয়তো ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তাও। তবে দেশের প্রয়োজনে সর্বাগ্রে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা যে রাখে ছাত্ররা, তার দৃষ্টান্ত ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন। পাঁচ-ছয় বছর আগে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা তা দেখিয়ে দিয়েছিল। ওই আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়াদের বেশির ভাগেরই তো ছাত্ররাজনীতির অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরও বলা হয় আন্দোলন তিনটি একাত্তরের পর দেশের সেরা ছাত্র আন্দোলন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us