ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে শেলের একটি ভাঙা টুকরো আছড়ে পড়েছিল উঠানে। কৌতূহলবশত পাড়ার ছোটবড় সবাই দৌড়ে এসে টুকরোটি দেখা শুরু করেছিল। একটি লোহার ফ্যানের মতো টুকরো মনে করে উপস্থিত মুরুব্বির কেউ ততটা ভীত না হয়ে নানা ব্যাখ্যা দেওয়ার পর পুলিশকে খবর দিয়েছে। কিন্তু পরদিন থেকে যা ঘটতে শুরু করেছে তাতে আতঙ্কের মাত্রা ছাড়িয়ে প্রাণভয়ে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তের কাছে বসবাসকারী পরিবারগুলো তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দূরে কোথাও নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সেসব অধিবাসী গণমাধ্যমকে বলেছেন, জান্তা বাহিনীর অত্যাচারী মগরা তাদের মুল্লুক থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আমাদের বিজিবির হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিয়েছে। নিজ দেশের বিদ্রোহীদের হাতে পরাজিত হচ্ছে মগরা। স্থানীয়রা তাদের এখনও মগ বলে সম্বোধন করে।
সবচেয়ে অভিনব ও অনভিপ্রেত ঘটনা শুরু হয়েছে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে অস্ত্রসহ পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের ৩৩০ জনকে ১৫ ফেব্রুয়ারি সমুদ্রপথে দেশে ফেরত পাঠানোর দিনও মিয়ানমার সীমান্ত থেকে গুলি-বোমার শব্দ ভেসে আসছিল। ফেব্রুয়ারির ১৬ তারিখ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও রাতে সেন্টমার্টিন সীমান্তের ওপারের গুলি-শেল-বোমার শব্দে ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছিল আমাদের স্থানীয় বাসিন্দাদের। সেন্টমার্টিন ইউপির চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, রাতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আমাদের সীমান্তের ওপারে কয়েকটি বিকট শব্দে কেঁপে উঠেছিল সেন্টমার্টিনের মাটি। মার্চের ৪ তারিখ আবারো নতুন করে গোলার শব্দ আতঙ্ক তৈরি করছে।
এর আগে সপ্তাহ ধরে মুহুর্মুহু গুলি, বোমার শব্দ, সীমান্তের পাহাড়গুলোর ওপরে হেলিকপ্টারের চক্কর, মর্টার শেলের আগুনের ঝলক জনমনে চরম ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। ছুটে আসা গুলি-শেলের আঘাতে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী একই পরিবারের কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। ভয়ে কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। তাদের টাকা, ধান-চাল, গবাদিপশুগুলোও অন্যত্র সারিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
বিদ্রোহী সশস্ত্র আরাকান আর্মিদের গ্রুপ ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সমন্বিত আক্রমণে টিকতে না পেরে নাস্তানাবুদ হয়ে প্রাণভয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষাকারী পুলিশ (বিজিপি) ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল।