প্রেম কি শিকলের মতো, হাত-পা বেঁধে রাখে? কিংবা ঘুড়ির নাটাই, অন্য ব্যক্তির হাতে থাকে যার নিয়ন্ত্রণ? নাকি উদার আকাশ, অতিরিক্ত ডানা? বিপুল সুখে উড়ে বেড়ানোর অতিরিক্ত শক্তি? প্রশ্নগুলোর জবাব তর্কসাপেক্ষ। অমীমাংসিত। কারও কাছে প্রেম সমস্ত শক্তির অনন্ত উৎস। কেউ ভাবেন, প্রেম মানেই শক্তির বিনাশ, অর্থহীন অপচয়। কারও কাছে পৃথিবীতে প্রেম ছাড়া কিছু নেই। কারও মতে, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই।
ব্যক্তিভেদে ভাবনার এই ভিন্নতা থাকুক। ‘আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে’—কবিগুরুর এমন যুগল প্রেমালাপও আজ থাক। আজ কথা হোক নির্মলেন্দু গুণের ‘আমার ভালোবাসা কিংবা প্রেম-সংক্রান্ত কোনো স্মৃতি নেই’ নিয়ে। কিংবা শুনে নেওয়া যাক নচিকেতা চক্রবর্তীর গান—‘পোশাকি প্রেমের প্রয়োজন বোধ করি না।’ পূর্বাপর পঙ্ক্তিগুলো ঝেড়েমুছে জয় গোস্বামীর ‘একাই থাকব, একাই দুটো ফুটিয়ে খাব’ পঙ্ক্তিতে স্থির করা যাক দৃষ্টি।
ভালোবাসাবাসির জটিল যুগলজীবন অনেকেরই পছন্দ নয়; বরং পছন্দ কৈফিয়তহীন মুক্ত জীবন। তাঁরা ভালোবাসেন নির্ভার, নির্ভেজাল জীবন। অন্য ব্যক্তিকে খুশি করার চাপ নেই। আপসরফার ব্যাপার নেই। প্রতিনিয়ত প্রেমের আনুষ্ঠানিকতা পালনের তাড়না নেই। প্রতিমুহূর্তে অভিযোগের তির তাক করা নেই পরস্পরের প্রতি। একা থাকার যে আনন্দ, নিজের মতো করে নিজে বাঁচার যে সুখ—তাঁদের কাছে তা তো কম কিছু নয়। ভুল-শুদ্ধ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি—সব হিসাব একপাশে সরিয়ে রেখে তাঁরা বলতে পারেন, ‘যেমনই হোক, এ আমার জীবন; আমি আমার মতো বাঁচি, কার তাতে কী?’