বিজেপি বা আরএসএস অখণ্ড ভারত নিয়ে যতই উচ্চবাচ্য করুক না কেন, তাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার নয়। অখণ্ড ভারতের ধুয়া তুলে তারা হয়তো রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারবে, কিন্তু তাদের পরিকল্পনা কোনো দিন বাস্তবায়িত হবে না।
গত ২৮ মে ভারতের নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই সঙ্গে তিনি মানচিত্রের একটি বিশাল আকৃতির ম্যুরাল উন্মোচন করেন। ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারকে নিয়ে তথাকথিত ‘অখণ্ড ভারত’ মানচিত্রের ম্যুরাল সংসদ ভবনের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হয়। সদ্য উন্মোচিত এই মানচিত্র নিয়ে বড় ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে। মানচিত্র উন্মোচনের পর পাকিস্তান সরকার ও নেপালের রাজনৈতিক নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রথমে নীরব থাকলেও পরে ৫ জুন এ বিষয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা জানার জন্য নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কোনো কারণ নেই। তারপরও বাড়তি ব্যাখ্যার জন্য আমরা দিল্লির মিশনকে বলেছি, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে, তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কী, তা জানার জন্য।’ এর জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ম্যুরালটিতে সম্রাট অশোকের রাজত্বের আওতাধীন এলাকা বোঝানো হয়েছে।
ভারতের এই ব্যাখ্যার পর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কী জবাব দেওয়া হয়, তা দেখার বিষয়।
তবে ভারতের চির বৈরী পাকিস্তান যথারীতি ক্ষোভ প্রকাশ করে কিছুটা কর্কশ ভাষায় প্রতিবাদ করেছে। পাকিস্তানের দাবি, ‘এই অখণ্ড ভারতের কথা হলো সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের ফসল। এটা শুধু ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষেরই নয়, ভারতেরও সংখ্যালঘুদের পরিচয় ও সংস্কৃতিকে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসার চেষ্টা। তাই এখন যে অখণ্ড ভারতের কথা বলা হচ্ছে, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। ভারতীয় রাজনীতিকেরা যেন এই নিয়ে কথা বলা বন্ধ করেন। তাঁরা যেন তাঁদের এই চেষ্টা থেকে দূরে থাকেন।’ এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে নেপালে। তাদের ভাষা ছিল আরও তীব্র ও ধারালো। লুম্বিনি ও কপিলাবস্তু নামের প্রসিদ্ধ দুটি অঞ্চল নেপালের অন্তর্ভুক্ত। এক জায়গায় গৌতম বুদ্ধের জন্ম, অন্য স্থানে শাক্য রাজত্বের রাজধানী ছিল; যেখানে বুদ্ধের বাল্যকাল কেটেছে। মানচিত্রে এই দুই অঞ্চলকেও ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এখানেই নেপালের তীব্র ক্ষোভের কারণ। দেশটির দুজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী পি শর্মা অলি ও বাবুরাম ভট্টরাই ভারতের প্রতি রীতিমতো হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তাঁরা ভারতে সফররত নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্পকমল দহল প্রচণ্ডের প্রতি অনুরোধ করে বলেছেন, তিনি যেন বিষয়টি নিয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনা করে বলেন, এই ম্যুরাল তাঁদের সংসদ ভবন থেকে সরিয়ে নেন।