গত ২৩ মার্চ প্রথম আলোর ২৭ জন নতুন কর্মীকে নিয়ে জ্যেষ্ঠ সহকর্মীরা অফিসের বড় সভাকক্ষটিতে বসেছিলাম। বসেছিলাম প্রথম আলোয় চর্চিত সম্পাদকীয় নীতি, মূল্যবোধ আর সংস্কৃতি তঁাদের বুঝিয়ে বলতে। সেখানে খুব সুনির্দিষ্টভাবে আমরা বলেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের যেটা চেতনা, এককথায় সেটাই প্রথম আলোর সম্পাদকীয় নীতির মূল ভিত্তি।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভেতরে গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, সম–অধিকার, সাম্য ও বাঙালিত্বসহ যেসব আদর্শের অভাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নেতা এবং কোটি মানুষকে পীড়িত করেছিল এবং মুক্তিযুদ্ধকে অনিবার্য করে তুলেছিল, সেই চেতনাই আমাদের সাংবাদিকতা–চর্চার ভিত্তি।
কারণ, এই আদর্শের চর্চার মধ্যেই আছে নাগরিক ও দেশের উন্নয়ন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আমাদের সাংবাদিকতার অন্তরে লালন করি। কারণ, আমরা সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জয় চাই।
অফিসের ভেতরের কথা যে বাইরে আনতে হলো, তার কারণ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা। আমাদের প্রথম আলোর সহকর্মী শামসুজ্জামানের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তৈরি ২৬ মার্চের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে কয়েক দিন ধরে তুলকালাম ঘটে যাচ্ছে। সে ফেসবুক পোস্টের ছবি আর প্রকাশিত উদ্ধৃতির ব্যক্তিরা ছিলেন আলাদা। উদ্ধৃতিটি সে ছবির ক্যাপশন হিসেবেও ব্যবহার করা হয়নি। তবু কোনো ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ যাতে না হয়, সে কারণে অতি দ্রুত পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। সাংবাদিকতার চর্চিত রীতি মেনে শামসুজ্জামানের প্রতিবেদনের নিচে এ ব্যাপারে সংশোধনীও দিয়ে দেওয়া হয়।
তাতেও ঘটনার জের থামেনি। শামসুজ্জামানকে সুবহে সাদিকের সময় তাঁর বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হলো। প্রায় ২০ ঘণ্টা তিনি গুম হয়ে থাকলেন। পরে পুলিশ তাঁকে দেশে–বিদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক দেখাল। জামিনের আবেদন অগ্রাহ৵ করায় তিনি এখন জেলে। একই মামলায় সম্পাদকসহ অজ্ঞাতনামাদেরও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এখানেই ঘটনার শেষ নয়। সংঘবদ্ধভাবে প্রচারণা চালিয়ে এখন বলার চেষ্টা করা হচ্ছে যে প্রথম আলো একটি স্বাধীনতাবিরোধী কাজ করেছে। গতকাল এডিটর’স গিল্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি স্বাধীনতাকে ‘হেয়’ করার শামিল।
প্রথম আলোর সম্পাদকীয় অবস্থানের কথা শুরুতেই বলেছি। ঘটনা এই যে প্রথম আলো প্রকাশের আগে থেকেই এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার ছিল। পত্রিকাটি বের হওয়ার এক মাস আগে, ৩ অক্টোবর ১৯৯৮, বাংলাদেশের সুধী সমাজের সদস্যদের নিয়ে আমরা একটি প্রীতি সমাবেশ করেছিলাম।