বর্তমানে ৪১তম বিসিএসের ভাইভা পরীক্ষা চলছে। এ ছাড়া এ বছরে ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের ভাইভা নেওয়ার পরিকল্পনা আছে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি)। ভাইভার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখলেই ভালো ভাইভা দেওয়া সম্ভব। অনেকে ভাইভা নিয়ে ভয়ে থাকেন। কীভাবে এই ভীতি দূর করা যায়, তা নিয়ে কথা বলেছেন পিএসসির সাবেক সদস্য সমর পাল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোছাব্বের হোসেন।
ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের পর কেমন মনোভাব রাখতে হবে?
সমর পাল: বিসিএসে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা কিংবা সাক্ষাৎকার—যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন, চাকরিপ্রার্থীদের জন্য বিষয়টি ভীতিকর কিছু নয়, বরং উত্তেজনাপূর্ণ উপভোগ্য অনুভূতি হতে পারে এবং সেটিই হওয়া উচিত। অহেতুক ভীতি নিয়ে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়া মানে সম্ভাবনার পথ বন্ধ করা। প্রার্থী সবজান্তা হবেন কিংবা সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে পারবেন অথবা সব উত্তরই প্রশ্নকর্তার কাছে যথার্থ সন্তোষজনক বলে বিবেচিত হবে—এমন আশা করা পাগলামির নামান্তর। আবার মিথ্যা তথ্য প্রদান, অতিরিক্ত স্মার্টনেস, অতিমাত্রায় অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে কেউ কেউ মনে করেন যে প্রশ্নকর্তাকে বোকা বানিয়েছি। এমন ধারণা পরিহার্য অবশ্যই। কারণ, উত্তর শুনে বোর্ডের কেউ কোনো ভুল ধরলেন না বলে মনে করার কারণ নেই যে তাঁদের বোকা বানানো সহজ। কারণ, যাঁরা বোর্ড সদস্য, তাঁরা নিশ্চয়ই এসব বুঝতে পারেন। তাই এসব বিষয় মাথায় রেখেই ভাইভা বোর্ডে যেতে হবে।
ভাইভার আগে ও পরে কী করা উচিত
সমর পাল: ভাইভার আগের রাতে প্রচুর পড়াশোনা ও রাত জাগা অনাবশ্যক। যেটুকু প্রস্তুতি দরকার, তা আগে থেকেই বারবার অনুশীলন করে সেরে রাখতে হবে। শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি করে কাগজপত্র বা ফাইল এবং প্রয়োজনীয় তথ্য গোছানো বোকামির কাজ। মূল কাগজপত্রের সেট, প্রতিলিপির সেট, ছবি, কলম, পেনসিল, সঠিকভাবে ফাইলে রাখা হয়েছে কি না, তা যাচাই করতে হবে। মৌখিক পরীক্ষার শেষে মূল কাগজপত্র অবশ্যই ফেরত নিতে হবে, যদি বোর্ড অনুমতি দেয়। যেটুকু পড়াশোনা আছে, সেটুকুই যথেষ্ট। পরিধানের কাপড় বা পোশাক শালীন ও মার্জিত হতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেলেদের জন্য টাই অপরিহার্য হতে পারে। অনেকেই টাই বাঁধতে পারেন—এমন দাবি করা যায় না। তবে টাই ব্যবহার করতে হলে ঠিকঠাক অবস্থানে সঠিকভাবে বাঁধাই উত্তম। মেয়েদের জন্য শাড়ি উত্তম। তবে যেকোনো সংযত শালীন এবং সাবলীল পোশাকে থাকার চেষ্টা করাই সংগত। বিশেষ রঙের পোশাক বা জুতা ব্যবহার করতেই হবে—এমন বাধ্যবাধকতা সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নেই। ভাইভা বোর্ডে কাপড় বা পোশাকের দিকে বেশি মনোযোগ মূল প্রশ্নোত্তর পর্বে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
ভাইভা বোর্ডে মনোভাব কেমন হওয়া উচিত?
সমর পাল: প্রার্থীর সহ্যশক্তি, ধৈর্য, মানসিক স্থিরতা, উত্তরে যুক্তির প্রাবল্য ইত্যাদিও কিন্তু ভাইভার অঙ্গ। আপনার মেজাজও পরীক্ষা করা হয় নানা ধরনের অনাবশ্যক প্রশ্ন বা মন্তব্য করে। ঘাবড়াবেন না। স্থির ভাবে প্রশ্ন বুঝে অল্প কথায় যুক্তিপূর্ণ উত্তর দিন। বিরক্ত হওয়া যাবে না।
আপনার নাম কে রেখেছেন? নামটির অর্থ কী? পারিবারিক এমনকি ব্যক্তিগত প্রশ্নও করা হতে পারে। প্রার্থীর মা কিংবা বাবা যদি শ্রমজীবী মজুর, কৃষক, দোকানি ইত্যাদিও হন, তবে তাঁদের সম্পর্কে যথাযথ পরিচিতি প্রদান আবশ্যক। ভুল করেও মিথ্যা পরিচয় দেবেন না। বাবা নৈশপ্রহরী কিংবা কোনো অফিসের নিম্ন শ্রেণিভুক্ত কর্মচারী হলেও কখনো বলবেন না যে তিনি ‘জব’ করেন, স্টাফ ইত্যাদি। বরং সরাসরি পরিচয় দিয়ে উত্তর দেবেন, যাতে প্রশ্নকর্তাকে দ্বিতীয়বার এ বিষয়ে আর প্রশ্ন করে সঠিক তথ্য খুঁজতে না হয়। মনে রাখবেন, বোর্ডের সদস্যদের প্রায় সবাই মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
ভাইভায় উত্তর জানা না থাকলে সেটি কীভাবে সামলাবেন?
সমর পাল: মুখ গোমড়া করে থাকবেন না। প্রশ্নকর্তার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিতে ভুলবেন না। উত্তর না জানা থাকলে সময় নষ্ট না করে ‘সরি’ বলুন। আমতা-আমতা করে এমন ভাব দেখাবেন না যে আপনি জানেন, অথচ পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না। আপনার স্বাভাবিক আচরণ ও ঠান্ডা মাথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বজায় রাখা জরুরি। বিদায় নেওয়ার আগে অনেকেই অনাবশ্যকভাবে লম্বা বাক্য ব্যবহার করে বোর্ডের বিরক্তি বাড়ান। একটি ছোট বাক্যে শুধু সালাম বা ধন্যবাদ জানানোই যথেষ্ট। আশা করি সুস্থ ও সাবলীল প্রশ্নোত্তরে আপনার লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করবে। আপনার সাফল্য কামনা করি।