১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার বাসিন্দা ফজলুল হক স্থানীয় নয়াহাটের জুয়েলার্স মালিক মোহন লাল ধর এর কাছে জমির দলিল বন্ধক রেখে নিয়েছিলেন ৫ হাজার টাকা। ঠিকাদারিতে লোকসান হওয়ায় দেওয়া হয়নি সেই টাকা। দিনের পর দিন বাড়তে থাকে সুদ।
১৯৯৬ সালে জমি বিক্রি করে দশ হাজার টাকা ফেরত দিতে গিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু সুদ-আসলে টাকার পরিমাণ আরও বেশি হওয়ায় তাঁকে ফিরে আসতে হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে দুই বছর পর মারা যান ফজলুল হক। মৃত্যুর আগে জুয়েলার্স মালিকের কাছ থেকে নেওয়া ৫ হাজার টাকার দেনা পরিশোধ করতে বলে যান কিশোর ছেলেকে।
প্রয়াত বাবার সেই দেনা পরিশোধ করতে ছেলে পাওনাদারকে খুঁজেছেন গত ২৭ বছর ধরে। ঠিকানা বদল হওয়ায় মিলছিল না খোঁজ। এরই মধ্যে মারা গেছেন সেই মোহন লাল। অবশেষে আনোয়ারার বটতলী ইউনিয়নের রুস্তমহাট এলাকায় পাওয়া যায় প্রয়াত মোহন লাল ধর এর নাতি সুজন ধর-কে। নিউ ওমান জুয়েলার্সে তাঁর হাতে নগদ টাকা তুলে দিয়ে বাবার দেনা থেকে দায়মুক্ত হলেন ছেলে মো. সেলিম হক।
কর্ণফুলী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার আগে বলে গেছেন যেন তাঁর দেনা আমি পরিশোধ করি। তিনি মারা যাওয়ার পর মা আর বোনকে নিয়ে কষ্টে পড়ি। সংসারের হাল ধরতে হয়েছিলো। এসএসসি পরীক্ষার পর টিউশনি আর চাকরি করে লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালিয়েছি। এরপর শুরু করলাম ব্যবসা। ২০১২ সালে মাকে নিয়ে হজে যাই। বাবার পাওনাদারকে খুঁজে না পেয়ে এলাকার মাওলানার পরামর্শে এক ব্যক্তিকে হজে পাঠাই এবং গরীবদের কিছু টাকা দান করেছি। তবুও মনে হতো, যার টাকা তাকে দিতে পারলে ভালো লাগতো’।
‘মা জানালেন, সেই পাওনাদারের বাড়ি আনোয়ারার শাহ্ মোহছেন আউলিয়া মাজার এলাকায় হতে পারে। এরপর আনোয়ারায় বিভিন্নজনের সহায়তায় চলে অনুসন্ধান। অবশেষে বটতলী এলাকায় গিয়ে সন্ধান মিলে মোহন লাল ধর এর ওয়ারিশদের সঙ্গে। আমাদের এলাকায় তাঁকে ‘মনু কর্মকার’ নামে সবাই চিনতো। তাঁরই নাতি সুজন ধর এর হাতে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকালে স্থানীয় আওয়ামী নেতা মো. মোক্তার জামানের মাধ্যমে তুলে দেওয়া হয় নগদ ২০ হাজার টাকা’।
‘৩৫ বছর পর বাবার দেনা শোধ করতে পেরে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সেরা কাজটি করলাম। বুকটা হালকা হলো। নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখী ভাবছি’-বলেন সেলিম হক।