যদি বলি, ‘বিষণ্নতার মেঘে ছেয়ে গেছে ঢাকা শহর’, তাহলে পাল্টা প্রশ্ন আসবে, ‘কেন?’ কারণ, বায়ুদূষণ। থেমে থেমে মেগাসিটি ঢাকা বায়ুদূষণে শীর্ষস্থান লাভ করছে সারা পৃথিবীর মধ্যে। ঢাকার আকাশ আচ্ছন্ন হচ্ছে বিষবাষ্প, ধুলার আস্তরণ ও ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে। আর বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভুগছে ঢাকাবাসী। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ডামাডোল এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিরাজমান চাপা উত্তেজনায় রাজধানী ঢাকা নিয়ে পরিবেশগত উদ্বেগজনক এ ইস্যু যথেষ্ট মনোযোগ ও গুরুত্ব পাচ্ছে—এমনটি বলা যাবে না।
১৬ মার্চ সকাল সাড়ে ছয়টায় প্রদত্ত প্রতিবদনে দেখা যায়, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ২১৭ নিয়ে ঢাকার বাতাসের মান ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ফলে, বায়ুদূষণের নিরিখে প্রণীত দূষিত শহরের তালিকায় আবারও ওপরের দিকে চলে এসেছে রাজধানী ঢাকা। ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, ৩০১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে থাকা একিউআইকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে। এ তালিকায় ২০২ একিউআই স্কোর নিয়ে প্রায়ই অবস্থান করে ভারতের রাজধানী দিল্লি; ১৭৩ নিয়ে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা, ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইয়ের স্কোর ১৬৯, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর স্কোর ১৫৯। বিপৎসংকুল পরিস্থিতি রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ও চীনের উহান।
মেগাসিটি ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে ভুগছে বায়ুদূষণে। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো: ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, বায়ুদূষণের কারণে সবচেয়ে বেশি বিষণ্নতায় ভুগছেন ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি বয়সীরা। বায়ুদূষণ ছিল বাংলাদেশে মৃত্যু ও অক্ষমতার দ্বিতীয় বড় কারণ। ওই বছর প্রায় ৮৮ হাজার মৃত্যুর জন্য বায়ুদূষণকে দায়ী করা হয়।
যদিও বসন্ত, তথাপি প্রকৃতি হয়ে আছে কেমন যেন ধূসর ও ধূসরিত। সামান্য কিছু ব্যতিক্রম বাদে জনবহুল এলাকায় গাছ, পাতা ও ফুল প্রাণহীন। তাদের সবুজ ও বর্ণিল শরীরে ধুলা ও ময়লার কালো কালো ছোপ। রাতেও আচ্ছন্ন আলোর বর্ণালি। মনে হয়, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টে জ্বলেনি পুরোটা আলো। ভুল নগরায়ণ ও ভ্রষ্ট পরিকল্পনায় ঢাকার বিকাশ চলছে বিপজ্জনক পথে। পুরান ঢাকার বাড়ি ও গলিগুলো আতঙ্কের নামান্তর। গ্যাসলাইন ফাটছে। পানি সরবরাহ কলুষিত। ভবনগুলো নড়বড়ে। পুরো পরিস্থিতিই দুর্ঘটনাবান্ধব।