ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাই যখন নিয়ন্ত্রণে

আজকের পত্রিকা প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩, ১৬:২৮

বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন’ শীর্ষক অধিবেশনে বক্তারা বলেছেন, দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা নিজেই এখন নিয়ন্ত্রণে। ফলে ব্যাংকিং খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার সামর্থ্য ওই সংস্থাটি শুধু যে হারিয়েছে তা-ই নয়, এ খাতে নিয়ন্ত্রণহীন বাঁধনহারা পরিবেশ টিকিয়ে রেখে ধূর্ত মালিক ও অসৎ গ্রাহককে বেসামাল লুটপাটে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিতেও ভূমিকা রাখছে। আর সেই ভূমিকার আওতায় খেলাপি ঋণের তথ্য লুকানো থেকে শুরু করে কিছুদিন পর পর এসআরও (Statutory Regulatory Order) জারি করে লুটেরাদের পক্ষে নানা ছাড় ও প্রণোদনা ঘোষণা ছাড়াও অনেক কিছুই রয়েছে। ধারণা করা যায়, নির্বাচনের বছর বিধায় এ ধরনের এসআরওভিত্তিক ছাড় ও প্রণোদনা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তেই থাকবে এবং সেই ধারায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপর গোষ্ঠীগত সংকীর্ণ স্বার্থের এ ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরও প্রসারিত হবে।


উল্লিখিত অধিবেশনে এ আলোচনাও এসেছে, ‘ভাই-মামাতো ভাই’দের পরিচালক বানিয়ে ব্যাংক পরিচালনা করাটাই ব্যাংকগুলোর আজকের এ দুরবস্থার অন্যতম কারণ। আর যে ব্যাংকে এ ধরনের পরিচালকের সংখ্যা যত বেশি, সেখানে দুর্নীতি, অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির মাত্রাও তত বেশি। এ প্রসঙ্গে অবলীলায় উঠে এসেছে বেসিক, পদ্মা, ইসলামী ও সোনালী ব্যাংকের কথা, যেগুলোর নানা কেলেঙ্কারির কথা এখনো মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু কী আশ্চর্য প্রহসন, কেলেঙ্কারির নায়কদের ব্যাপারে রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা তন্দ্রাচ্ছন্ন নীরবতায় নিমগ্ন। আসলে যা কেলেঙ্কারিকে আড়াল করার কৌশল মাত্র। নইলে বলুন তো, কোন কারণে বেসিক ব্যাংকের কেলেঙ্কারির নায়ক তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু সব ধরনের জবাবদিহির ঊর্ধ্বে? কোন কারণে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো কোনো কারণ বা যুক্তি খুঁজে পায় না কিংবা কোন কারণে ব্যাংক তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করে না?


দেশে এখন ঘোষিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা (ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত সময়ের হিসাব), যা এর পূর্ববর্তী প্রান্তিকের তুলনায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কম। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ কি এতটুকু কমেছে? মোটেও না। তাহলে খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ার এ দৃষ্টিনন্দন তথ্য জনসমক্ষে এল কেমন করে? বিষয়টি আসলে চতুর কৌশলের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। পুনঃ তফসিলকৃত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এ পরিমাণ কমে গেছে। কী আশ্চর্য চালাকি ও ফাঁকিবাজি! এখন কথা হচ্ছে, ব্যক্তির সঙ্গে ব্যক্তির ঘটে যাওয়া প্রতারণা ও চালাকির ঘটনার কথা প্রায়ই শোনা গেলেও রাষ্ট্র কেন তার জনগণের সঙ্গে চালাকি বা প্রতারণা করবে? কিন্তু খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তো আসলে তা-ই করছে; অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ওপর বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু নিয়ন্ত্রণই হারায়নি, অনিয়ন্ত্রিত অনাচারকে জোরদার করে তুলতেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে, খেলাপি ঋণ নিয়ে তথ্য গোপন করা বা ঋণখেলাপিদের এরূপ অন্যায় কর্মে প্রশ্রয় ও সমর্থন জোগানো আর কত দিন চলবে কিংবা শিগগিরই কি তা বন্ধ হবে? এ-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ের ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও তাঁদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপের দিকে তাকালে মনে হয় না তা কমবে। তারপরও এ মর্মে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করব যে ব্যাংকের ওই খেলাপি ঋণ তো আসলে আমানতকারীদের জমানো বা রক্ষিত অর্থেরই অংশ, যা এভাবে কুক্ষিগত বা ভোগ করার কোনো অধিকারই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের নেই। তাহলেও যে এর উদ্যোক্তারা এরূপটি করে যাচ্ছেন, সেটি কি নীতিগতভাবে গ্রহণযোগ্য? বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসন হারিয়েছে বুঝলাম। কিন্তু সেখানে কর্মরত নীতিনির্ধারকেরা কি তাঁদের ন্যূনতম আত্মমর্যাদা ও দায়বোধের শেষ বিন্দুটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন? তার চেয়েও বড় কথা, দেশের ব্যাংকিং খাত এভাবে চলতে থাকলে শেষ পর্যন্ত তা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে কি না? যদি করে, তাহলে তার দায় কে বহন করবে?


ব্যাংকিং খাতে বর্তমানে যে লুট পরিস্থিতি চলছে, তা থেকে এ খাতকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও রক্ষা করতে না পারলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে তা কোন অবস্থার দিকে নিয়ে যায়, সেটি একটি চরম উদ্বেগের বিষয় বৈকি! এ অবস্থায় রাষ্ট্র যদি তার আর্থিক খাতের নীতিকাঠামোকে ন্যূনতম পরিসরে হলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের স্বার্থের অনুগামী করে ঢেলে সাজাতে না পারে, তাহলে তা দেশে এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, যা মোকাবিলার সামর্থ্য হয়তো কারোরই থাকবে না। তাই দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে ব্যাংকিং খাতে আর কোনো হীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকা উচিত হবে বলে মনে করি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us