কক্সবাজারের উখিয়ায় বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি ব্লকের ঘরগুলো যখন জ্বলছিল, জীবন বাঁচাতে দিগ্বিদক ছোটাছুটির মধ্যে ‘অপরিচিত কয়েকজনকে’ সি ব্লকে আগুন দিয়ে ভিড়ের মধ্যে হাওয়া হয়ে যেতে দেখার কথা বলেছেন অগ্নিকাণ্ডে সর্বস্ব হারানো এক রোহিঙ্গা নারী।
জহুরা বেগম নামে ওই নারী দাবি করেন, “যারা আগুন লাগিয়েছে তারা ক্যাম্পের বাসিন্দা নয়, বহিরাগত।” আগুন দেওয়ার পরই তাদের ‘পালিয়ে যেতে দেখেছেন’ তিনি।
বালুখালী ১১ নম্বর আশ্রয় শিবিরে রোববার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই ওই ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত’ হিসেবে বর্ণনা করে স্থানীয় রোহিঙ্গারা দাবি করছেন, ‘আধিপত্য বিস্তার করতে’ মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা তাদের ক্যাম্পে আগুন দিয়েছে।
তবে ঘটনা তদন্তে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে গঠিত কমিটি বলছে, ওই অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, তদন্তের পরেই তা বলা যাবে।
রোববার বালুখালী ১১ নম্বর আশ্রয় শিবিরের ব্লি ব্লকে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত হলে লাগোয়া আরো কয়েকটি ব্লকে তা ছড়িয়ে পড়ে। তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে যায়, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা।
ঘটনার পরদিন অতিরিক্ত জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাম্পগুলোর বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, তাদের সন্দেহ ‘আরসার দিকেই’। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা তাদের।
বালুখালী ১১ নম্বর আশ্রয় শিবিরের সি ব্লকের ৪৮ বছর বয়সী নারী জহুরা বেগম বলেন, ঘটনার সময় তিনি তার ঘরেই ছিলেন। রোববার দুপুরে হঠাৎ করে চারদিকে আগুন আগুন বলে শোরগোল শুনতে পান। ঘর থেকে বের হয়ে তার ব্লকের পাশেই ডি-ব্লকের ঘরগুলো জ্বলতে দেখেন। জীবন বাঁচাতে সেসময় দিগ্বিদিক ছুটছিল মানুষ।
“এর কিছুক্ষণ পরই সি-ব্লকে অপরিচিত কয়েকজন লোক আগুন লাগিয়ে দিয়ে মানুষের হৈ-হুল্লোড়ের মধ্যে ঢুকে পালিয়ে যেতে দেখেছি।”
আগুনে নিজের ঘর হারানো এ নারী দাবি করেন, “যারা আগুন লাগিয়েছে তারা ক্যাম্পের বাসিন্দা নয়, তারা বহিরাগত দূর্বৃত্ত। সি-ব্লকের আব্দুল হামিদের ঘরে আগুন দিয়ে এসব দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।”
আগুন লাগানোর ঘটনাটি ‘পরিকল্পিত’ বর্ণনা করে এর পেছনে ‘আরসার হাত রয়েছে’ বলে দাবি করেন একই ব্লকের আরেক বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ।