সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিলেন রোহিঙ্গা নারী শামসুন্নাহার (৪০)। এর পর তাঁদের আশ্রয় হয় কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে। সেখানে একটি ঘরে সন্তানদের নিয়ে বাস করছিলেন তিনি। রোববার আগুনে পুড়ে সেই মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও ছাই হয়ে গেছে। পরদিন সকালে ধ্বংসস্তূপের কিছুটা দূরে ত্রিপলের ছাউনি টানিয়ে সন্তানদের নিয়ে বসেছিলেন শামসুন্নাহার। চেহারায় ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তার ছাপ।
তিনি বলেন, আগুন লাগার পর সবাই প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছাড়েন। কেউ কোনো কিছু নিতে পারেননি; সব পুড়ে গেছে। রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত খাবার পড়েনি কারও পেটে। সবাই রাত কাটিয়েছেন নির্ঘুম।
একইভাবে খোলা জায়গায় চার সন্তান নিয়ে অবস্থান করছেন আমেনা খাতুন (৩৬)। তাঁর স্বামী আবুল কালাম পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর খুঁজে দেখছেন কোনো কিছু ব্যবহারের উপযোগী আছে কিনা। আমেনা খাতুন বলেন, সবকিছু চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল। গভীর রাত পর্যন্ত কেউ ধ্বংসস্তূপের দিকে যেতে পারেননি। কিছুক্ষণ পরপর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হচ্ছিল। সবাই আবার নিঃস্ব হয়ে গেল।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোববার বিকেলের আগুনে প্রায় ২ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। এর ফলে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন ১২ হাজার মানুষ। বর্তমানে তাঁদের অনেকেই শামসুন্নাহার ও আমেনা খাতুনের মতো খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। সেখানে খাবার ও পানির সংকট চলছে। ধ্বংসস্তূপে নিজেদের মূল্যবান জিনিসপত্র ও আসবাব খুঁজছেন কেউ কেউ। কেউ আবার নিজের ঘরের অবস্থান চিহ্নিত করে খুঁটি পুঁতে রাখছেন।
রোহিঙ্গারা জানান, এদিন বিকেল ৩টায় প্রথমে ১১ নম্বর ক্যাম্পের ‘বি’ ও ‘ই’ ব্লকে আগুন লাগে। পরে পার্শ্ববর্তী ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথক জায়গায় একসঙ্গে আগুন জ্বলতে দেখেন তাঁরা। প্রচণ্ড গরম ও উত্তর দিক থেকে ছুটে আসা বাতাসে মুহূর্তে অন্য বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। ঘরগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো ও ঘনবসতি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।