আইএমএফের ঋণ ও দেশের ব্যাংক খাতের সংস্কার

বণিক বার্তা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:০২

বিশ্বজুড়েই কভিড-১৯-এর পর যে আঘাত এসেছে, সেটা মোটামুটি অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও কাটিয়ে উঠছিল; কিন্তু অর্থনীতির গতি হয়েছে ধীর। তারপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে। মাঝখানে চালসহ অন্যান্য পণ্যের দাম আনপ্রেডিক্টেবল হয়ে গিয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, যা সাধারণ কোনো বিষয় নয়।


বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থাও নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে, যার শুরু কভিডের আগে থেকেই। তবে কভিড ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ একে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট শুধু বৈদেশিক কারণে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়; দেশের অভ্যন্তরীণ কারণও কম দায়ী নয়, যা বহু আগে থেকেই ছিল। ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি, সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতার অভাব, সরকারি ট্যাক্স আদায়ে দুর্বলতা ইত্যাদি কারণ ছিলই। বড় কোম্পানিকে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে ভিন্ন চোখে দেখার নীতি এখনো বহাল রয়েছে। কৃষি খাতও অবহেলিত। সবকিছু ছাপিয়ে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চ মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবেই এটি ৯ শতাংশ। বাজার পরিস্থিতি বলছে, এ হার আরো বেশি।


ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সাত-আট লাখ মানুষ এরই মধ্যে বিদেশে গিয়েছে, কিন্তু রেমিট্যান্স আশানুরূপ আসছে না। এটা খুবই আশ্চর্যজনক ব্যাপার। ফলে অবস্থা আরো খারাপ হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদও সীমিত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর আহরণও বাড়াতে পারেনি। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না। পাশাপাশি কর্মসংস্থান কমে গিয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও কমে গিয়েছে, সামাজিক জীবনে বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এখন আমাদের দরকার কীভাবে আমরা সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি, তার একটি সঠিক রোডম্যাপ। এ প্রসঙ্গে আসছে বৈদেশিক রিজার্ভ কীভাবে বাড়ানো যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। বিলাসপণ্য আমদানিতে কঠোরতা আরোপ। কিন্তু ডলারের মূল্য নির্ধারণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে এক রকম আবার রফতানিতে আরেক রকম দাম, রেমিট্যান্সে আবার অন্য রকম। একাধিক রেট মানুষকে দ্বিধান্বিত করে। এর কিন্তু সুফল আমরা দেখতে পাচ্ছি না।


বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মূল বিষয় হলো প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। এ কারণেই বেশির ভাগ সংকটের শুরু। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে। ৪৫০ কোটি ডলার দিতে এসে তারা নানা শর্ত যুক্ত করছে। কিছু ব্যবস্থা নেয়ার কথা অনেক আগে থেকেই আমরা বলে আসছিলাম। কিছু শর্ত আছে যা বাংলাদেশের জন্য এ মুহূর্তে বাস্তবায়ন কঠিন। তারা দেশের আর্থিক খাতে কিছু সংস্কারের কথা বলেছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, দেশের আর্থিক খাতের যে অবস্থা এটা অন্যান্য ঋণদাতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানকে ভুল বার্তা দেয়। বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বা জাইকার কাছে সরকার অর্থ চাইবে তারাও জানতে চাইবে বাংলাদেশের কী কী ইতিবাচক বার্তা রয়েছে আর কী কী চ্যালেঞ্জ। তারা মূল্যায়নের জন্য মিশন পাঠাবে। সবাই আর্থিক খাতে সংস্কার, এনবিআরের ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বলছেন। এসবের পরও আমাদের অর্থনীতিতে কিছু ভঙ্গুরতা বিদ্যমান। এগুলো প্রধানত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। মুদ্রাপাচার ও জবাবদিহিতার অভাব আরো দুটি বড় সংকট। সংস্কার আইএমএফ বলুক বা না বলুক একান্তভাবে করা দরকার। সমস্যাগুলো এত বড় হতো না, যদি আগে থেকেই সংস্কার করা হতো। আগে আমরা এগুলো পাশ কাটিয়ে এসেছি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে পলিসিমেকারদের অস্বীকার করার প্রবণতা। আমলাদের মধ্যেও সংকটকে অস্বীকার করার প্রবণতা বিদ্যমান। কয়েকদিন আগেও বলা হলো, রিজার্ভ সমস্যা মিটে গিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে, জানুয়ারির মধ্যে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কিসের ভিত্তিতে তারা বলছেন, তার ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us