সুকুমার রায়ের প্রায় ১০০ বছর আগের লেখা গল্প 'যতিনের জুতো' শুরু হয় এভাবে- 'যতিনের বাবা তাকে এক জোড়া জুতো কিনে দিয়ে আচ্ছা করে শাসিয়ে কইলেন, এইবারে যদি জুতো ছেঁড়ো, তাহলে ছেঁড়া জুতোই পরে থাকতে হবে। প্রতি মাসে যতিনের নতুন জুতোর দরকার হয়।' যতিন যে বাবার কথা অমান্য করতে চায় তা নয়। 'নতুন জুতো নিয়ে কিছুদিন যতিন বেশ সাবধানে চলাফেরা করল; ধীরে ধীরে সিঁড়ি থেকে নামে... সদা সতর্ক থাকে যেন হোঁচট না খায়। কিন্তু অতটুকুই সার। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার সেই পুরোনো যতিন।' এবার আর কেবল ছেঁড়া নয়, সেই ছেঁড়া জুতো পায়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে চিতপটাং হয়ে যতিন একেবারে শয্যাশায়ী।
এখনকার যতিনদের বাবারা আর এভাবে শাসান কিনা, বা তাদের শাসাতে হয় কিনা ঠিক জানি না, কিন্তু এটা জানি যতিনদের জুতো আর সেভাবে ছেঁড়ে না। কারণটাও আমরা জানি। এখনকার জুতো হয়তো অনেক মজবুত, কিন্তু সেটা মূল কারণ নয়। মূল কারণটা হচ্ছে যতিনরা আর দৌড়াচ্ছে না। লেখাপড়া আর দালানকোঠার চাপে তারা পর্যাপ্ত সময় বা জায়গা পাচ্ছে না। শিক্ষক বা অভিভাবকরাও মনে করছেন খেলাধুলা করে সময় নষ্ট করার চেয়ে ঘরে কিংবা কোচিং সেন্টারে কতক্ষণ দম বন্ধ করে কিছু পড়া গিললে দুটো নম্বর আসবে। তীব্র প্রতিযোগিতাময় পরীক্ষার যুদ্ধক্ষেত্রে ওই নম্বর দুটোই রক্ষাকবচ। এই যুগে ওসব বাদ দিয়ে বালক-বালিকাদের আর বালখিল্য আচরণের কোনো মানে হয় না।