কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় সেই সব নবীনকে চিরসুন্দর বলেছেন, যারা ভেঙে আবার গড়তে জানে। যে ব্রিটিশ শাসনকাঠামোতে তারা বাস করে, তা ভেঙে আবার গড়ে প্রগতির যাত্রী হতে পারে বলেই তারা চিরসুন্দর। মহাকালের প্রেক্ষাপটে দেখলে দেখা যাবে, হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষরা ঠিক এই কাজটাই করেছেন। বারবার নিজেদের ভেঙে-গড়ে নতুন নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছেন, পুরো পৃথিবীকে তাঁদের করায়ত্তে এনেছেন।
আমাদের যারা প্রতিপক্ষ ছিল, তারা হয় আমাদের বশ মেনেছে, নয়তো এই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। বুদ্ধির দিক দিয়ে আমাদের নিকটতম প্রাণী হোমো সোলোনসিস (Soloensis) ৫০ হাজার বছর আগেই এই ধরাধাম ত্যাগ করে। এর কিছুদিন পরই হোমো ডেলিসোভাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। শেষ যে নিয়ান্ডারটালের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে সেটা আরেকটু পরের, ৩০ হাজার বছর আগের। এর পরও কিছু বামন আকৃতির মানুষ ছিল, তারাও ১২ হাজার বছর আগে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আমরা যে টিকে আছি, জগতের যাবতীয় জীব ও জড় পদার্থকে পদানত করতে পেরেছি, তার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে আমরা কখনো নিজেদের পরিবর্তন করে, কখনো বা প্রকৃতিতে পরিবর্তন এনে ক্রমাগত আমাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি। আমরা ভালো করেই জানি, শুধু উপভোগের জন্য নয়, টিকে থাকার জন্যও আমাদের এই ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে চলমান রাখতে হয় এবং সেটাকে চলমান রাখার অন্যতম চালিকাশক্তি হলো এই অভিযোজন করার মানসিকতা ও দক্ষতা।