একটা প্রশ্ন আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়: যুক্তরাজ্য, ব্রিটেন, গ্রেট ব্রিটেন, ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ, ইংল্যান্ড- এগুলোর মধ্যে পার্থক্য কী? সংবাদমাধ্যমেও অনেক সময় যুক্তরাজ্য আর ব্রিটেনকে গুলিয়ে ফেলা হয়। তাই আজই দূর করে নিন সব বিভ্রান্তি। জেনে নিন এদের আসল পার্থক্যগুলো… যুক্তরাজ্যযুক্তরাজ্য বা ইউকে হলো ‘ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মতো এটিও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তবে এই রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে চারটি পৃথক দেশের সমন্বয়ে: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। যুক্তরাজ্য গঠনের ইতিহাসটি বেশ দীর্ঘ ও জটিল। তবু জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য এর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো- সাল ৯২৫: কিংডম অব ইংল্যান্ড। অ্যাংলো-স্যাক্সন উপজাতিদের একীকরণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ইংল্যান্ড রাজ্য। সাল ১৫৩৬: কিংডম অব ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস। রাজা অষ্টম হেনরি প্রণীত একটি বিলের মাধ্যমে কার্যকরভাবে একই দেশে পরিণত হয় ইংল্যান্ড ও ওয়েলস, যাদের শাসনব্যবস্থা চলবে একই আইনের অধীনে। সাল ১৭০৭: কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন। কিংডম অব ইংল্যান্ডের (ওয়েলসহ) সঙ্গে স্কটল্যান্ড আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়ে গঠন করে কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন, যা গ্রেট ব্রিটেন নামে পরিচিত।
সাল ১৮০১: ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড। ব্রিটিশ ইউনিয়নে আয়ারল্যান্ড যোগ দেওয়ার ফলে আবারও বদলে যায় নাম। সাল ১৯২২: ইউনাইটেড কিংডম অব গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র (বা দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড) ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে গেলেও থেকে যায় আয়ারল্যান্ডের উত্তর অংশের কাউন্টিগুলো (নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড)।
আজ অবধি এটিই যুক্তরাজ্য হিসেবে রয়েছে। যুক্তরাজ্য কবে গঠিত হয়?কিছু লোকের যুক্তি, ১৭০৭ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের মধ্যে ‘অ্যাক্ট অব ইউনিয়ন’ স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই যুক্তরাজ্য গঠিত হয়েছিল। তবে আয়ারল্যান্ডকে ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির আগে ১৮০১ সাল পর্যন্ত ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্য নামটি গৃহীত হয়নি। ব্রিটেন বা গ্রেট ব্রিটেনগ্রেট ব্রিটেন কোনো দেশ নয়। এটি একটি স্থলভাগ মাত্র। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের বৃহত্তম দ্বীপ এবং এর মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ও ওয়েলস অন্তর্ভুক্ত থাকার কারণেই সম্ভবত একে ‘গ্রেট’ (বিশাল) বলা হয়। ব্রিটেন নামটি এসেছে রোমান শব্দ ‘ব্রিটানিয়া’ থেকে। তবে এর সামনে ‘গ্রেট’ শব্দটি কেন আটকে গিয়েছিল, তা নিয়ে দুটি পরস্পরবিরোধী মতামত রয়েছে। প্রথমটি হলো, এটি ব্রিটেনকে তার অনুরূপ শব্দগুলো থেকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়; যেমন- প্রতিবেশী ফ্রান্সেই একটি ছোট এলাকা রয়েছে ‘ব্রিটানি’ নামে। দ্বিতীয়টি হলো রাজা প্রথম জেমসের অহংকার। তিনি স্পষ্ট করতে চেয়েছিলেন যে, প্রথম জেমস কেবল পুরোনো রোমান ব্রিটেনের (যাতে শুধু ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের কিছু অংশ অন্তর্ভুক্ত ছিল) নন, বরং গোটা দ্বীপের রাজা ছিলেন।